"জীবন যেখানে যেমন"বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: স্বনামধন্য লেখক আরিফ আজাদ একজন আলাের ফেরিওয়ালা। বিশ্বাসের দর্শন দিয়ে লেখালেখির জগতে পা রাখা এই লেখক এবার হাজির হয়েছেন জীবনের কিছ... See more
"জীবন যেখানে যেমন"বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: স্বনামধন্য লেখক আরিফ আজাদ একজন আলাের ফেরিওয়ালা। বিশ্বাসের দর্শন দিয়ে লেখালেখির জগতে পা রাখা এই লেখক এবার হাজির হয়েছেন জীবনের কিছু গল্প নিয়ে। জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গল্পগুলােকে লেখক তুলে এনেছেন তার শৈল্পিক রং-তুলিতে। আলাে থেকে স্ফুরিত হওয়া সেই অসাধারণ গল্পগুলাে যেমন জীবনের কথা বলে, তেমনই জীবনে রেখে যায় বিশ্বাসী মূল্যবােধের গভীর এক ছাপ। জীবন যেখানে যেমন নিরেট গল্পের একটি বই। তবে কেবল গল্পের বই বলে একে মূল্যায়নের সুযােগ নেই। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে লেখক তার পাঠকদের জন্য রেখে গিয়েছেন চিন্তার কিছু খােরাক। পাঠকের ভাবুক মন যদি সেগুলােয় নিবিষ্ট হয়, আমরা আশা করতে পারি, গল্পের পাশাপাশি তারা জীবনের কিছু উপকারী পাঠ কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হবে। লেখক আরিফ আজাদ তার লেখনীশক্তির মুন্সিয়ানায়। গল্পগুলােকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। এ কারণে প্রতিটি গল্পই হয়ে উঠেছে সুখপাঠের এক বিশাল আধার। এ বইতে পাঠকসমাজ নতুন এক আরিফ আজাদকে আবিষ্কার করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে বলতে হচ্ছে, লেখক নিজস্ব বানান ও ভাষারীতি অনুসরণ করে থাকেন। ফলে বহুল ব্যবহৃত কিছু শব্দের অচেনা রূপ দেখে তারা বিভ্রান্ত হবেন না—এই কামনা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য আর সুন্দরের পথে অবিচল রাখুন। আমিন।
আরিফ আজাদ একজন জীবন্ত আলোকবর্তিকা- লেখক আরিফ আজাদকে বর্ণনা করতে গিয়ে একথাই বলেছেন ডঃ শামসুল আরেফিন। গার্ডিয়ান প্রকাশনী আরিফ আজাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, “তিনি বিশ্বাস নিয়ে লেখেন, অবিশ্বাসের আয়না চূর্ণবিচুর্ণ করেন।” আরিফ আজাদ এর বই মানেই একুশে বইমেলায় বেস্ট সেলার, এতটাই জনপ্রিয় এ লেখক। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা লেখকদের একজন আরিফ আজাদ। চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া এ লেখক মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রাম জিলা স্কুলে। একটি সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন। লেখালেখির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আরিফ আজাদ এর বই সমূহ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তার প্রথম বই ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ পায়। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র সাজিদ বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে তার নাস্তিক বন্ধুর অবিশ্বাসকে বিজ্ঞানসম্মত নানা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে খণ্ডন করে। আর এসব কথোপকথনের মধ্য দিয়েই বইটিতে অবিশ্বাসীদের অনেক যুক্তি খণ্ডন করেছেন লেখক। বইটি প্রকাশের পরপরই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এটি ইংরেজি ও অসমীয়া ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। ২০১৯ সালের একুশে বইমেলায় ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ - ২’ প্রকাশিত হয়ে এবং এটিও বেস্টসেলারে পরিণত হয়। সাজিদ সিরিজ ছাড়াও আরিফ আজাদ এর বই সমগ্রতে আছে ‘আরজ আলী সমীপে’ এবং ‘সত্যকথন’ (সহলেখক) এর মতো তুমুল জনপ্রিয় বই।
নাম: এ.কে.এম শাদমান শাকিব বইয়ের নাম :"জীবন যেখানে যেমন " ""~কখনো জীবন শান্ত নদী, কখনো সে বেগবান, কখনো জোয়ার ভাটায় রইছে চলমান। কখনো আবার কালবৈশাখী ঝরে ভেংগে খানখান, আবার কখনো ভালবাসার ডোরে বেধে রাখে সব প্রাণ ভীষণ আলাদা তার বয়ে চলার ধরন, তেমনি সে জীবন যেখানে যেমন!""
"জীবন" খুব ছোট্ট একটি শব্দ। অথচ তার বিকাশের পথটা কিন্তু নানান রঙ্গে রাঙ্গা, নানান রূপের সমাহার, কতই না বৈচিত্র্যময় !আর তার এই বৈচিত্র্যতার উপর যদি সাহিত্য শিল্পীর রং-তুলির পরশ লাগে, সুখপাঠের জগতে হারিয়ে যাবার জন্য তাইই যথেষ্ট। দৈনন্দিন জীবনে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে একবার ভুলেও মাথায় আসেনি, এই যে এমন অনবদ্য একটা বিদেশী আধুনিক প্রযুক্তির মাঝে এত্ত সহজে মাতৃভাষায় নিজের জমানো কথা প্রকাশ করে যাচ্ছি ,এমনকি আজকের এই বুক রিভিউটাও,বাংলা লেখাটাকে যিনি আমাদের জন্য সহজ করে দিলেন সেই "মেহেদি হাসান" ভাইয়াকে আমরা অনেকেই চিনি না।বইয়ের শুরুতে তার প্রতি লেখকের পক্ষ থেকে এমন surprizingly কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যমটা আমার কাছে একান্তই অনন্য লেগেছে ।প্রিয় লেখক এর পরে আমিও মেহেদী হাসান ভাইয়াকে অন্তর থেকে জানাই একরাশ ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা।
লেখক: লেখালেখির জগতে,তরুণদের মাঝে "আরিফ আজাদ" এক অনবদ্য নাম। বেস্টসেলার বই "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" দিয়ে তার এই কলম-কালির জগতে পদার্পণ। সত্যি বলতে আল্লাহর রহমতে দ্বীনের সঠিক বুঝটা পেয়েছি তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়েই ;আলহামদুলিল্লাহ।
লেখার পটভূমি: দুনিয়ার চোরাবালি থেকে বেরিয়ে আসতে, জীবনের প্রকৃত ট্র্যাকটা চেনার জন্য একটা বইই সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হতে পারে। কিন্তু আজকের সিটিজেনরা তো নেটিজেন হিসেবে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ।আমাদের বাংলা সাহিত্যের মোটামুটি সিংহভাগই প্রেম-ভালোবাসা, দুঃখ ,গোয়েন্দা ,কল্পকাহিনী- এসব দিয়েই ভরপুর ! অথচ সাহিত্যের মূল চালিকাশক্তি যে মানুষের জীবন আচার, তার কথা যেন সাহিত্যিকগণ বেমালুম ভুলেই গেলেন। মূলত তাদের কথাকে ডিফেন্ড করার জন্যই এভাবে আবির্ভাব হয়েছে এই বইয়ের।
পাঠ্যকথন ও শিখনফল: বইটিতে মূল পাঠ্য হিসেবে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের ১৪টি গল্প। মরীচিকাময় দুনিয়ার এই রঙ্গমঞ্চে মানুষকে কতই না রঙে রঙিন হতে হয়,কত চরিত্রে সাজতে হয় তাকে! কখনো পিতা, কখনো সন্তান ,কখনো বা স্বামী !লেখক আমাদের জীবনের নানান দিকে সুন্দর সুন্দর গল্পে গেঁথে বইটাকে করে তুলেছেন অনবদ্য প্রতিটি গল্পেই যেন জীবনের বিভিন্ন পর্যায় খুঁজে পাই। প্রারম্ভের গল্পটা পড়ার সময়ে বুঝতে পারলাম, যে দুনিয়ার কষ্ট আর ত্যাগ বিশ্বাসীদের জন্য আশা এবং প্রাপ্তিরই নামান্তর।কিন্তু কেউ তা উপলব্ধি করতে পারে আর কেউ পারে না। এর পাশাপাশি প্রচলিত কুসংস্কার এর একটা দৃশ্যপটও ফুটে উঠেছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছি চতুর্থ গল্প অর্থাৎ "বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়" ফাতিমার কথা শুনে। তার উদারতা এবং আত্মত্যাগ সত্যিই বিরল। অন্যদিকে "বাবাদের গল্প" পড়তে গিয়ে আপ্লুত হতে হয়েছে । নিজেকে কেমন যেন অপরাধী বলে মনে হচ্ছিল! আবিরের এমন বোধোদয়ে নিজেকে অনেক লজ্জিত বলে মনে হল এই ভেবে- ঈশ! ওই সময়টায় যদি জেদ ধরে না থেকে যদি আবিরের মত আমারও বোধোদয় হতো?এরপর ৮ নম্বর গল্পটির নাম "বিশ্বাস" হলেও মূলত এখানে "অন্ধবিশ্বাস" এর কুফল সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। আবার মায়ের প্রতি ভালোবাসা,ভক্তি এবং কৃতজ্ঞতার বোধোদয় ঘটেছে ১০ম(বোধ) এবং ১৩শ (মহীয়সী) গল্পে। এছাড়াও ১৩শ গল্পে তথাকথিত নারীবাদীদের জীবনচরিত ফুটে উঠেছে , যারা বাইরে নারী স্বাধীনতার বুলি আওড়াতে-আওড়াতে নারীকে "ভোগের পণ্য" হিসেবে গড়ছে তথা "objectification" করছে। অথচ বাড়ির ভেতরে কাজের মেয়েটাকে যেন তার নারীই মনে হয় না। ইতিগল্পটা যেন আমাদের তরুণ সমাজের জন্য একটি বিশেষ বার্তা পাঠায়.. আসলে সফলতার সংজ্ঞা কি? বড় বড় ডিগ্রী, মাটির এই পৃথিবীতে ক্ষণিকেরনীড়ের পরিবর্তে বড় বড় ফ্ল্যাট ,6 ডিজিট স্যালারির জব--এগুলোই কি সফলতার নামান্তর? না।মরীচিকাময় ধূসর পৃথিবীর ছোট্ট জীবনের কিছু কষ্ট এবং ত্যাগের পুঁজির মাধ্যমে পুলসিরাত পার করে অনন্ত জীবনের ব্যবসায়ে জান্নাত লাভ করা টাই তো হচ্ছে প্রকৃত সফলতা। এভাবে শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি গল্পই যেন আমাকে নতুন কোন বার্তা দিয়ে গেছে।
ব্যক্তিগত পর্যালোচনাঃ বইটা আমাকে নতুন ভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। জেনেছি জীবনের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে । কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে লেখকের সর্বোচ্চটা পাইনি। পূর্ববর্তী বই যেমন "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ " কিংবা "বেলা ফুরাবার আগে" এর প্রতিটি অধ্যায়ের প্রতিটি কথা ছিল অনেক বেশি হৃদয়গ্রাহী এবং অন্তরে আঘাতকারী , যা এই বইয়ে ততটা পাইনি। সম্পূর্ণ বইটিতে শুধুমাত্র একটি জায়গায় 'প্রিন্টিং মিসটেক ' পেয়েছি। এছাড়া লেখক কেন একটা নাম বার বার ব্যবহার করেছেন বেশ কিছু গল্পে,, তা অবশ্য আমাদের অজানা। তবে বইটিতে এমন কিছু লাইন আছে যা পড়লে চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়াবে,তার মধ্যে থেকে গুটিকয়েক কথা শেয়ার করি-
? লাভ কি চোখে দেহন যা গো মিয়া ভাই!
?যে রিজিক আসমান থেইকা আসে,তার লাগি এতো পেরেশানি কিসের?জমিরুদ্দিন সরদারের এই ঈমান ও তাওয়াক্কুলের জন্য আল্লাহ কিভাবে কিভাবে তাকে কবুল করে নিলেন!
?জলন্ত চুলোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রেবেকার মন থেকে চাওয়া স্বামীর জন্য ছোট্ট একটি দোয়া কতো সহজেই কবুল করে নিলেন রব্ব!
?একজন সন্তানহারা নিঃস্ব মা এর প্রতি সকলের তীব্র অপমান ও অবহেলার পর তার রেখে যাওয়া হৃদয় শীতলকারী সেই চিরকুট!
?মা দেখো,আমি আমার বাবার মতোন হইনি!
?ফাতিমার মতোন এতো বড় আত্নত্যাগ করার মতোন বড় হৃদয় আছে কিনা আমার, নিজেকে প্রশ্ন করতেও ভয় করেছিলো!
?আহারে মানুষ!কচুপাতার ওপর জমে থাকা শিশিরবিন্দুর মতোই ঠুনকো মানুষের জীবন।হালকা বাতাসে পাতা দুল্লেই গড়িয়ে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়!
?মুয়াজ্জিন বলছে, "হাইয়্যা আলাল ফালাহ"। মানে হলো-সফলতার পথে এসো ।জীবনে সফল হতে চাইলে চলো আমরা সালাতে যাই।
জীবনকথনের অসাধারণ এই বাক্যগুলো এ বইয়ের অলংকার, যা সত্যিই মুগ্ধ করে,কাঁদায়, ভাবায়! বইটা সবার জন্য হলেও আমার মতে বর্তমানের হারাম রিলেশনশিপে থাকা "young stars" দের জন্য effective হবে ইনশাআল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম। গল্প পড়তে আমরা সবাই পছন্দ করি। শিশু, বালক-বালিকা, তরুণ-তরুণী, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ-মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই গল্প পড়তে ভালোবাসে। গল্পটা যদি ইসলামিক হয় এবং গল্পের মাধ্যমে যদি কিছু শিখা যায় তাহলে গল্পের গুরুত্বটা ও গল্পের প্রতি ভালোবাসাটা আরও বেড়ে যায়। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমাদের মধ্যে অনেকেই ইসলামিক গল্প পড়তে ও শুনতে পছন্দ করে। জীবন যেখানে যেমন বইটিকে ইসলামিক গল্পের বই বললেও ভুল বলা হবে না। প্রিয় লেখক আরিফ আজাদ এই বইটিতে ১৫ টি গল্প লিখেছেন। প্রতিটি গল্পই মানব জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আমার কাছে এই বইয়ের প্রতিটি গল্পই বাস্তবমুখী মনে হয়েছে। প্রিয় লেখক প্রতিটি গল্পের সূচনা করেছেন খুব সাধারণভাবে। কিন্তু যত গল্পের গভীরে যাওয়া যায় ততই গল্পের ভাবার্থ ও মর্মার্থ বোঝা যায়। যদি গল্পের কোনো চরিত্রের সাথে নিজের চরিত্রের কোনো দিক মিলে যায় তাহলে নিজের মধ্যে একটা উপলব্ধি আসে। প্রতিটি গল্পই হ্রদয়কে স্পর্শ করে। কোনো গল্প পড়তে গিয়ে চোখ অশ্রুসিক্ত হয় আবার কোনো গল্প পড়ে নিজেকে পরিবর্তন করতে ইচ্ছা হয়। কোনো গল্পে লেখক তুলে ধরেছেন সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা। সন্তানের শখ আহ্লাদ পূরণ করতে গিয়ে বাবা ভুলেই যান তার আর্থিক অভাব-অনটনের কথা। কোনো গল্পে লেখক তুলে ধরেছেন টাকা-পয়সা, যশ-খ্যাতি এইসবের বিনিময়েও যুবক একজন নারীকে মহীয়সী করার জন্যে মিথ্যা গল্প পত্রিকাতে লিখে নি। এইরকম আরও অনেক বাস্তব জীবনের সাথে সাদৃস্যপূর্ণ বিষয় লেখক এই বইটিতে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। প্রতিটি গল্পের মধ্যেই লেখক কিছু কথা বলেছেন যেগুলো আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে এবং চিন্তাধারার পরিবর্তন আনতে পারে। আমার যে কথাটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তা হলো " যে রিযিক আসমান থেইকা আসে তার লাগি এত পেরেশানি কিসের?" সত্যিই তো আমাদের রিযিক তো নির্দিষ্ট করাই আছে তাহলে কেন আমার অতিরিক্ত পাওয়ার আশায় অবৈধ পথে পা বাড়াবো আর কেনই বা দ্বীনের পথে ব্যয় করা হতে বিরত থাকব? আবার এই বইয়ের একটি গল্পে লেখক বলেছেন " ফ্যানের নিচে বসে হাওয়া গিলতে থাকা তোমার অস্বস্তি কাটাতে বৃষ্টির জন্য দোয়া করছে জলন্ত চুলোর পাশে থাকা এক রমণী কি অবিশ্বাস্য ভালোবাসা, কি অনুপম মায়ার বাধঁন।" মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষ এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী পৃথিবীর সকল মানুষ জানে মৃত্যু এক অবিশ্বাস্য সত্য। মৃত্যু নিয়ে লেখক বইটিতে বলেছেন, " মৃত্যু বিশ্বাস- অবিশ্বাসের ধার ধারে না সে তার দম্ভের মতো অমোঘ, সে তার শক্তির মতো অবশ্যম্ভাবী।" লেখক বইটিতে মানব জীবনকে শিশিরবিন্দুর সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, " কচুপাতার ওপর জমে থাকা শিশিরবিন্দুর মতোই ঠুনকো মানুষের জীবন হালকা বাতাসে পাতা দুললেই গড়িয়ে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।" বইটিতে লেখক মানব জীবনের কিছু দিক খুব সুন্দর ও সাবলীলভাবে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। কেউ যদি বইটি খুব মনোযোগের সাথে পড়ে এবং লেখক যা বোঝাতে চেয়েছেন সেটা উপলব্ধি করতে পারে তবে ইনশাআল্লাহ তার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে বলে আমার মনে হয়। হে আল্লাহ বইটির লেখক, যারা বইটি প্রকাশ করার জন্য অকৃত্রিম পরিশ্রম করেছেন এবং পাঠকদের সুস্থতা দান করুন, হেদায়েত দান করুন। হে রব্বুল আলামীন লেখক আরিফ আজাদ ভাইকে আপনি দ্বীনের পথে কবুল করুন। আমিন। আসসালামু আলাইকুম।
Read More
Was this review helpful to you?
By Mishal Mollah,
07 Jun 2021
Verified Purchase
#Rokomari_Book_Club_Review_Competition রিভিউ নং:২ বইয়ের নাম:জীবন যেখানে যেমন লেখকের নাম: আরিফ আজাদ প্রকাশনী:সমকালীন প্রকাশন প্রকাশকাল:২০২১ পাঠকের নাম:মিশাল মোল্লা
বাংলা সাহিত্যের একটা সম্পদ হিসেবে আরিফ আজাদ এইবার হাজির করেছে তার শব্দের বুননে করা অনবদ্য শিল্পকর্ম "জীবন যেখানে যেমন"। বাংলা সাহিত্যে বর্তমান সময়ে সাধারণত ইসলাম বিদ্বেষীদের একক রাজত্ব দেখা যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। বাংলা সাহিত্য জুড়ে ফ্রি মিক্সিং, হারাম রিলেশন এর মত গর্হিত কাজ গুলোকে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন এটিই আমাদের সংস্কৃতি। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির জাতাকলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছিল বাংলা সাহিত্যের রূপ,রস,গন্ধ। বিশ্বাসি সমাজের দারুন জনপ্রিয় লেখক আরিফ আজাদ সেই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও আমাদের রেহাই দিচ্ছে। জনপ্রিয় সব সাহিত্যিকরা ইসলামের বিভিন্ন রুকন নিয়ে উস্কানি মূলক লেখা লেখছে সেখানে তিনি এইসব রুকনের সৌন্দর্য দিয়েছেন। নাস্তিক,সেক্যুলার,ইসলাম বিদ্বেষীদের জবাব দিয়ে তুমুল আলোচিত এই লেখক এইবার ভিন্ন পদ্ধতিতে,সাহিত্যের মাধ্যমে এদের জবাব দিয়েছে।গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ নিয়ে সাহিত্য চর্চা করা যখন মানুষ এক প্রকার ভুলেই গেছে তখন তিনি গ্রামের বিশ্বাসী মহল থেকে তুলে এনেছেন এই গল্পগুলো। দেখিয়েছেন নারী আন্দোলন এর ভাঁওতাবাজি। আশিক্ষিত,সাধারণ,গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ জমির চাচার আল্লাহর উপর ভরসার জোর তিনি শব্দের গাঁথুনি দিয়ে গেথেছেন।মনে হয় লেখা গুলো দ্বারা তিনি বিশ্বাসীদের বিশ্বাস মজবুত করার উপকরণ জোগাড় করার পদ্ধতি শিখিয়েছেন। বহুবিবাহ যেখানে বর্বর, মধ্য যুগীয় এবং নোংরা হিসেবে গণ্য করা হয় সেখানে তিনি এর সৌন্দর্য দেখিয়েছেন।
প্রতিটি গল্পের সারাংশের উপর আলোক পাত করা হলো:
অশ্রু ঝরার দিনে: এই গল্পটিতে গ্রামে প্রচলিত একটি কুসংস্কার ও এর ক্ষতিকর প্রভাব এর প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।মিনু নামের এক নারীর সন্তান হারানোর পরেও অপরিসীম ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি আস্থার একটি গল্প এখানে দেখানো হয়েছে।
এই প্রেম এই ভালোবাসা: স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র প্রেম এর সুন্দর উপমা দেওয়া হয়েছে।
আসমানের আয়োজন: জমির চাচার আল্লাহর উপর আস্থা ও আল্লাহর রিজিকের উপর ভরসার গল্প এখানে দেওয়া হয়েছে।
চাওয়া না চাওয়া: মেয়ে সন্তান পালনের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।
এক বৃষ্টভেজা সন্ধা: বহুবিবাহের সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে।
জীবনের রকমফের: স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
হিজল বনের গান: মায়ের স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্বাস: পীরের ভাওতাবাজি এবং গ্রাম বাংলার কুসংস্কার দেখানো হয়েছে।
সুখ: আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করাটা যে প্রকৃত সুখ সেটি বোঝানো হয়েছে।
বোধ: একটি ঘটনার মাধ্যমে শুধরানো যুবকের গল্প।
বাবাদের গল্প: বাবার সাংসারিক জীবনে ত্যাগের নিদর্শন।
টু-লেট: গ্রাম বাংলার স্বপ্ন ভাঙা এক যুবকের গল্প।
মহীয়সী: নারী আন্দোলনের ভাঁওতাবাজি এবং প্রকৃত মহীয়সীর গল্প। সফলতা সমাচার: সফল হওয়ার প্রকৃত ও একমাত্র উপায় ইসলামে সম্পূর্ণরূপে আত্নসমর্পন করা এবং এর বিধি-বিধান মেনে চলা।
প্রিয় চরিত্র:জমির চাচা, আলাদিন, রেবেকা, ফাতিমা।
Read More
Was this review helpful to you?
By Parvej Hasan,
16 May 2024
Verified Purchase
আমার পড়া প্রথম বই এটা । আমি জানতাম বইটা একবার পড়া শুরু করলে পুরোপুরি না শেষ করা পর্যন্ত শান্তি আসবে না । বইয়ের কিছু লাইন যা আমাকে মুগ্ধ করেছে । এখনো বইটি শেষ করা হয়নি আর বইটি শেষ পর্যন্ত অনেকগুলো লাইন দিয়ে আমাকে মুগ্ধ করবে ।
∆ শোক আর শখের লড়াইয়ে আজ শোকটাই জয়ী ।
∆ দুপুর থেকে বাইরে কয়লা পড়া রোধ । রোদের তেজ আর তাপে ঘরের ভেতরটাও উনুনের মত গরম হয়ে আছে । মাথার ওপর অবিরাম অবিশ্রান্তভাবে ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানের হাওয়াগুলো যেন বিদ্রোহ করে বসেছে । গায়ে হাওয়া লাগছে না অগ্নিগিরির তাপ লাগছে বোঝা মুশকিল ।
∆ আমাদের ঘরে টিমটিমে একটি আলো জ্বলছে । বাতাসের ঝাপটাই নিভু নিভু অবস্থা ; বাতাস একটু কমলেই সজরে ভীষণ বিস্ফোরণে সমস্ত শক্তিসমেত সেটা দপ করে জ্বলে উঠে । বাতাস আর কুপি - বাতির মধ্যে যেন অলিখিত কোন যুদ্ধ লেগেছে ; কার শক্তি বেশি তা প্রমাণে উভয়পক্ষ বিলকুল মরিয়া
∆ আরেকটু অপেক্ষা ? ঠিক কতক্ষণ অপেক্ষা করে থাকলে মিটে যাবে আরেকটু অপেক্ষার প্রহর ?
∆ ভয় আশা আর আনন্দের ত্রিমুখী সংঘর্ষে আমি বিধ্বস্ত ।
∆ ফেসবুকের গভীর থেকে গভীরে গিয়ে তুলে আনছি মিস হয়ে যাওয়া ঘটনাগুলোকে সময়ের সঙ্গতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখছি দুর্দান্তভাবে ; কে জানে , আগামীকাল অফিসে গিয়ে যদি দেখা যায় আজকের কোন ঘটনা নিয়ে খুব শোরগোল পরে গেছে কিন্তু তার বিন্দু বিসর্গও আমার জানা নেই তখন আমার নাকউঁচু কলিগেরা আমার দিকে কি অদ্ভুত ভাবেই না তাকাবে ! সূর্যের নিকটতম গ্রহ বৃহস্পতিতে প্রাণের সন্ধান মিলবার সংবাদেও তারা এতখানি চমকাবে না যতখানি চমকাবে আমাকে দেখে । বিস্মিত ধরে রাখতে না পেরে কেউ কেউ বলেও বসতে পারে , ' একটা ঘটনা ঘটার ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেল আর আপনি তার কিছুই জানেন না ? কোন দুনিয়ায় বাস করেন আপনি ?
∆ মস্তিষ্কের কোষ গুলোতে যেন দারুন এক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ।
∆ এই জঘন্য গল্পটা না শুনলে যদিও মনটা শান্ত থাকতো , তবুও সেটা আমাকে জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
∆ পকেটের আমার সকরুণ অবস্থা ! ফুলের মালা নিলে গাড়ি ভাড়া দিতে পারবো না , গাড়ি ভাড়ার কথা ভাবলে ফুল নেওয়া হবে না । চরম দোটানাই শেষ পর্যন্ত ফুলের মালারি জিত হলো । আজ না হয় ল্যাম্পপোস্টের আলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাব ঘরে ।
∆ আমার স্ত্রী রে এসে দাঁড়াবে, আলতো করে একটা মালা আমি তার খোঁপায় গুঁজে দেবো। আমি জানি সে খুব খুশি হবে। আনন্দ আর আহ্লাদে দৌড়ে সে আয়নার কাছে গিয়ে জানতে চাইবে, ‘আমাকে সুন্দর লাগছে না?” আমি বলব, ‘একটা ফুলের গায়ে চড়েছে অন্য একটা ফুল। কোন ফুলটাকে যে বেশি সুন্দর লাগছে সেটা নির্ণয় করা কঠিন। বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছি।’ আমার কথায় লজ্জা পেয়ে সে একেবারে কুঁকড়ে যাবে। আমি তো ভীষণ সুখে আছি। একজীবনে সুখী হতে আর কী লাগে?
Read More
Was this review helpful to you?
By Kazi Nishat Aunjum,
15 Jun 2021
Verified Purchase
বই : জীবন যেখানে যেমন। লেখক : আরিফ আজাদ
লেখক আরিফ আজাদকে সবাই ইসলামি লেখালেখির জন্য চিনলেও সাহিত্যিক হিসেবেও যে তিনি বেশ প্রশংসার দাবি রাখেন তা লেখকের 'জীবন যেখানে যেমন' বইটি পড়ে অনুভব হল।
লেখক শব্দে শব্দে ফুটিয়ে তুলেছেন জীবনের বাস্তব গল্প গুলোকে। এই গল্প গুলো শুধু গল্প না হয়ে যেন মুসলিম আদর্শ জীবনধারা ধারণ করেছে। . পুরো বইজুড়ে ১৪ টি গল্পে ফুটে উঠেছে লেখকের সাহিত্যিক প্রতিভা। বইয়ের শুরুতেই কুসংস্কারের বেড়াজালে আটকা পড়ে ছিন্ন বাঁধনের গল্পে মনে খানিকটা বিষাদ জমলেও, পরের গল্পেই কথক আর কথকের স্ত্রীর অদ্ভুত ভালোবাসার বন্ধন সেই বিষাদকে দূরীভূত করে। এরপর আসে এক হৃদয়স্পর্শী গল্প। গল্পটা এক পাড়াগাঁয়ের জমিরুদ্দিন চাচার ভরসার গল্প। পুরো গল্পে তার বিশ্বাস ও তার ফল মন ছুঁয়ে যায়।
এর ঠিক পরেই স্থান পেয়েছে 'চাওয়া না চাওয়ার' সুখ-বিষাদের এক অদ্ভুত গল্প। শিক্ষার সঠিক দ্যুতির বর্ণচ্ছটা মন ভরিয়ে দেয় শেষে। তারপর স্যাক্রিফাইসের এক অনন্য উদাহরণ দিয়ে লেখক সাঝিয়েছেন এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যার গল্প। যে গল্প হয়তো সাধারণ জীবনের কিন্তু ভাবাবে। জীবনের রকমফেরের বর্ণনায় পরের গল্পে লেখক দেখিয়েছেন আমাদের চেনা কিন্তু অবহেলিত এক বাস্তবতাকে। হয়ত নিজের ঘরেও এই বাস্তবতা কিন্তু পরিবর্তনের সুরটা সুখের ভাব আনে। এরপর হিজল বনের গান, যার পরিবেশ মনকে শীতল করবে। এর পরে বিশ্বাস নিয়ে খেলা করা সোনারচরের পীর, মানুষের অজ্ঞতা ও অন্ধবিশ্বাসের পরিণামের এক গল্প। একেক মানুষের সুখের সংজ্ঞা আর বোধ ফেরা এক সন্তানের গল্প এসেছে ধারাবাহিকভাবে।
বাবাদের না দেখা গল্পটার সুন্দর উপস্থাপন, ভাবতে শেখাবে প্রতিটা সন্তানকেই। করোনা যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক শফিক সাহেবের গল্প শেষে লেখক লিখেছেন এই বইয়ের অন্যতম সুন্দর গল্প 'মহীয়সী'। সফলতা সমাচারে লেখক ধর্মীয় শিক্ষার ফলাফলকে বেশ ইউনিক ভাবে তুলে ধরেছেন।
অধিকাংশ গল্পে হাদিসের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ধারা প্রবাহ বাংলা সাহিত্যে বেশ অনন্য লেগেছে। মুসলিম হিসেবে এটা বেশ নজড়কাড়া লেগেছে।
কিন্তু একজন পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে লেখক গল্পের শুরুতে যেভাবে মুগ্ধ করেছেন অনেক ক্ষেত্রে শেষটায় তেমন আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেননি। কয়েকটা গল্পের শেষে এ গিয়ে লেখকের প্লট দুর্বল মনে হয়েছে।