ঝুম্পা লাহিড়ী ইংরেজিতে লিখেই খ্যাতি পেয়েছিলেন। তিনি যখন পুরাদস্তুর ইতালীয় ভাষায় গল্প লিখতে শুরু করেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, লেখালেখির ক্ষেত্রে কেন তিনি পুরো ভাষাটাই বদলে ফেললেন। ঝুম্পা লাহিড়ীর মতে, কাঠামো ভাঙার পাশাপাশি যদি চর্চিত ভাষাটাও বদলে ফেলার সুযোগ থাকে, তাতেও চিন্তার বড়ো বদল আসে। অমিতাভ ঘোষের ভাষায়ও পৃথিবীর নিয়ম হচ্ছে বারবার বদল হওয়া। একটা ভবন পুরানো হলে ভেঙে পড়ে কিন্তু একটা গাছ বারবার বিবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘকাল টিকে থাকে। ফলে পৃথিবীর মধ্যেই বদলের যে অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, সময়ের সাথে সাথে চিন্তার যে বিবর্তন ঘটে, গল্পের ভাষা ও চিন্তার এই বিবর্তনের পাশাপাশি গল্প বলার মুনশিয়ানা ফজলুল কবিরীর গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রত্যেক মানুষ তার জন্মশহর ও স্মৃতির সাথে নানা বোঝাপড়ায় লিপ্ত হতে চায়। ফজলুল কবিরীর গল্পেও তার শৈশব ও স্মৃতি এমনভাবে আসে যা কেবল তারই নিজস্ব। তার গল্পে আরও বেশি বিচ্যুতি থাকলে ভালো হতো, তাতে খানিকটা নিন্দামন্দ করে নিজের পাণ্ডিত্য জাহিরের সুযোগ পাওয়া যেত।
অলাত এহ্সান [কথাসাহিত্যিক]
ফজলুল কবিরীর গল্পবিষয়ক দর্শন আমার ভালো লেগেছে। আমিও ছোটোগল্পকে এভাবে দেখতে চাই যেখানে শুধুমাত্র কাহিনি বলে দেওয়া থাকবে না; থাকবে বহুমাত্রিকতা, ভাবনা এবং অনুভবের জায়গা। তিনি গল্প নিয়ে ভাবেন এবং সময় দেন অনেক, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তিনি মৌলিক চিন্তায় সমৃদ্ধ গল্প আরও লিখুন এবং পাঠকের সাথে একটি চমৎকার ভাবনাসেতু তৈরি করুন, এই কামনা করি।
হাসান মাহবুব [কথাসাহিত্যিক]
ফজলুল কবিরীর গল্প পাঠে অনুভব করা যায় একটা রাষ্ট্র কী পরিমাণ নৈরাজ্যের ভেতর দিয়ে পরিচালিত হয় এবং পরিণতিতে সামাজিকভাবে কতটুকু বিপর্যয় ডেকে আনে এমনকি এক পর্যায়ে মানুষ মনে মনে ভাবতে শুরু করে, আমাদের কি কিছুই করার নেই? এসব বিষয়কে গল্পে তুলে আনার অনিবার্যতা এবং এর মাধ্যমে সময়কে ধরে রাখার যে দক্ষতা জরুরি তা আমরা ফজলুল কবিরীর গল্পে দেখতে পাই।
ইশরাত তানিয়া [কথাসাহিত্যিক]
গল্প-উপন্যাসের ক্ষেত্রে এন্টারটেইনিং উপাদানের চেয়ে চিন্তার গভীরতাকে আমি অনেক বেশি মূল্য দিই। ফজলুল কবিরীর গল্পের মূল দিক হচ্ছে বিষয়বস্তু ও চিন্তার গভীরতা। তার কাছে প্রত্যাশা থাকবে ভবিষ্যতেও যেন কথাসাহিত্যে তিনি তার মতো করেই চিন্তার জায়গাগুলোকে উসকে দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
প্রমিথ রায়হান [কথাসাহিত্যিক]
ফজলুল কবিরীর ছোটোগল্প পড়েছি এতদিন, যদ্দুর পড়েছি সেগুলোর বুনট ধূসর কোনো দৃশ্যচিত্রের মতো, দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হয় রঙের বিষণ্নতার কারণেই, এরপর সে-চিত্র গেঁথে যায় মগজে।
এনামুল রেজা [কথাসাহিত্যিক]
ফজলুল কবিরীর লেখা যখন পড়ি, মনে হয় নান শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনকে দেখছি। আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন সমকালীন সমাজের বিভিন্ন চিত্রের সাথে; মুহূর্তেই অংশীদার হই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দৈনন্দিন সুখ-দুঃখের বয়ানের। তিনি তার গল্পে সামাজিক খণ্ডচিত্রকে এমনভাবে রূপায়িত করেন যা ধ্রুপদি সাহিত্যিকের পরিচয় বহন করে।
মোস্তফা অভি [কথাসাহিত্যিক]