ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা সমসময়ের একজন প্রধান কথাশিল্পী শওকত আলীর মতে “ আখতারুজ্জামানের রচনা পাঠ সাহিত্যামোদীর কাছে সততই আনন্দময় অভিজ্ঞতা।....... তাঁর লেখার ভেতর দিয়ে আমাদের প্রত... See more
TK. 400 TK. 355 You Save TK. 45 (11%)
দুঃখিত, বইটি বর্তমানে আমাদের ও প্রকাশনীর স্টকে নেই, নতুন স্টক এলে পুনরায় অর্ডার নেওয়া হবে। রিস্টক নোটিফিকেশন পেতে Request for Reprint বাটন ক্লিক করুন
ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা সমসময়ের একজন প্রধান কথাশিল্পী শওকত আলীর মতে “ আখতারুজ্জামানের রচনা পাঠ সাহিত্যামোদীর কাছে সততই আনন্দময় অভিজ্ঞতা।....... তাঁর লেখার ভেতর দিয়ে আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের জগৎটির মধ্যেই যে আরও নানান দেখবার ও বুঝবার দিক আছে আমরা তা নতুন করে আবিষ্কার করতে পারি।..... জীবন ও জগৎকে দেখবার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আবিষ্কার কবি।” আমাদের বিশ্বাস আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পসমগ্র পাঠের অভিজ্ঞতা পাঠককে বারবার এই উপলদ্ধি ও আবিষ্কারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।নিজের সম্পর্কে ইলিয়াস বলতেন যে তিনি চব্বিশ ঘণ্টার লেখক।তিনি বেঁচেছেন, পথ চলেছেন, মানুষের সঙ্গে মিশেছেন এই লেখকের চোখ নিয়ে। জীবনকে তিনি দেখেছেন একজন লেখকের চোখে, তার সমগ্রতায়। উপন্যাসের মতো তাঁর গল্পগুলোতেও যে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশকিত, গভীর জীবনবোধ ও ধারালো হিউমাসের সাক্ষাৎ পাই তাতে সহজেই আমরা তাঁকে একজন বড় মাপের লেখক হিসেবে চিনে নিতে পারি।সাধারণ নিম্নবর্ণের মানুষের মুখের ভাষাও তাঁর লেখায় মর্যাদা পায়, এমনকি স্ল্যাং-ও হয়ে ওঠে আশ্চর্যরকম শিল্পিত। পাঠককে তিনি শুধু গল্প বলেন না, তাকে ভেতর থেকে নাড়া দেন, ঝাঁকুনি দিয়ে জাগিয়ে রাখেন।সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে তাকে ভীষণ অস্বস্তির মধ্যেও ফেলেন। “মানুষের শাণিত স্পৃহা ও দমিত সংকল্পকে আবর্জনার ভেতর থেকে খুঁজে বের করে আনার” যে-দায়িত্বের কথা তিনি বলেছিলেন, কথাসাহিত্যিক হিসেবে আমৃত্যু নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেই সে-দায়িত্ব পালন করে গেছেন। উপন্যাসের খোলামেলা চত্ত্বরে ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীকে যেমন তাদের ত্রিকাল জুড়ে দর্শন ও অস্তিত্ববান করা যায়, ছোটগল্পে তেমন সুযোগ কম।ছোটগল্পের আঁট-সাঁট বন্ধনে স্থান, কাল ও ব্যক্তিকে যথাযথভাবে শিল্পায়িত করতে ইলিয়াস যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। সূচিপত্র *নিরুদ্দেশ যাত্রা *উৎসব *প্রতিশোধ *যোগাযোগ *ফেরারী *অন্য ঘরে অন্য স্বর *খোঁয়াবি *অসুখ-বিসুখ *তারা বিবির মরদ পোলা *পিতৃবিয়োগ *মিলির হাতে স্টেনগান *দুধভাতে উৎপাত *পায়ের নিচে জল *দখল *কীটনাশকের কীর্তি *যুগলবন্দি *অপঘাত *দোজখের ওম *প্রেমের গপ্পো *ফোঁড়া *জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল *কান্না *রেইনকোট
গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মামাবাড়ি। এই মাতুলালয়েই ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পূর্ণনাম আখতারুজ্জামান মুহম্মদ ইলিয়াস হলেও মঞ্জু ডাকনামেও তার পরিচিতি রয়েছে। পৈতৃক বাড়ি ছিলো বগুড়ায়, তাই বগুড়া জিলা স্কুল থেকেই ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এরপর চলে আসেন ঢাকায়। ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেয়ার পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, যেখান থেকে তিনি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আগাগোড়া। জগন্নাথ কলেজের প্রভাষক পদ থেকে শুরু করে মিউজিক কলেজের উপধ্যাক্ষ, প্রাইমারি শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরিচালক পদেও নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান হয়েছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং উপন্যাস লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন। কবিতার প্রতিও ঝোঁক ছিলো তার, লিখেছিলেন কয়েকটি কবিতা, তবে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কবিতা কখনো প্রকাশিত হয়নি। ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রথম গ্রন্থ ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’ প্রকাশিত হয়। তার বাচনশৈলী সাধারণ পাঠকদের কাছে প্রথমদিকে বেশ খটমটে লেগেছিলো। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রথম উপন্যাস ‘চিলেকোঠার সেপাই’, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৮৭ সালে। এছাড়াও আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার আরেকটি উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’। আখতারুজ্জামান এর বই সমগ্র-তে মোট দুটি উপন্যাস, পাঁচটি গল্পগ্রন্থ ও একটি প্রবন্ধ সংকলন রয়েছে। ‘খোয়াবনামা’কে তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলা হলেও আখতারুজ্জামানের ইলিয়াসের ছোটগল্পগুলোও পেয়েছে সমালোচকদের প্রশংসা। তার রচনা বিশ্লেষণধর্মী। পিতা বদিউজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন বিধায় রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণ ছিলো স্বাভাবিক ঘটনা। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এর বই সমূহ-তে তাই স্বাদ পাওয়া যায় রাজনীতির, এবং তার লেখার মাধ্যমে সমষ্টি ও ব্যক্তিকে দিয়েছেন সমান মর্যাদা। মুক্তমনা এ লেখক ১৯৮৪ সালে ‘সাহিত্য শিবির’ নামে একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংঠনের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র এবং বাংলা সাহিত্যে বহুমাত্রিক অবদানের জন্য ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৯৬ সালে আনন্দ পুরস্কার পান। ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি এই সৃষ্টিশীল লেখক ইহলোক ত্যাগ করেন।
ভাল লেখা আসলে-যাকে বলে-খানিকটা বিটকেলে গন্ধের মত। সুগন্ধর আবেদন খুব বেশিক্ষণ থাকে না, নাকে হয়তো রয়ে যায় বেশ কিছু সময়, কিন্তু মাথা থেকে দুরে সরে যেতে সময় নেয় না একটুও। গোলাপ বা রজনীগন্ধা শুঁকলে পরে খানিক পরেই ভুলে যাই, তুলনায় খানিকটা পেট্রোল পোড়া গন্ধ, অথবা সদ্য জ্বালানো দিয়াশলাই কাঠি বা না জ্বালানো বারুদ- এই সব অদ্ভুত কিসিমের গন্ধই মাথায় রয়ে যায় অনেকক্ষণ। ধুপ বা ধুনোর ধোঁয়ার মত মাথায় ঘুরতে থাকে, চুলের গোড়া ঘিরে ঘিরে থাকে।
ক'দিন, বেশ ক'দিন ধরেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসে ডুবে আছি। পড়তে পড়তে অদ্ভুত সব অনুভুতি হয়, মনে ও মাথায়। দরজা জানালা আটকে লুকিয়ে গাঁজা টানার মত একটা নিষিদ্ধ উত্তাপে ভরা আনন্দ লাগে, যতক্ষণ ইলিয়াস পড়তে থাকি। একদম প্রথম গাঁজা খাবার দিনটার কথা মনে আছে বেশ। নাখালপাড়ার রেললাইনের পাশের কোন একটা ঝুপড়ি ঘর থেকে কিনে এনে ওখানকারই কোন একটা দালানের একটা ঘরে আমি আর আমার প্রতাপশালী গাঁজাখোর বন্ধু যখন আমার ডেব্যু করছিলাম, আমি শুরুতেই বেশ কিছু লম্বা টান দিয়ে ফেলেছিলাম। আর বারে বারেই বলছিলাম, দেখিস, ওসব নেশা টেশা আমার হবে না। তারপর ক্রমশ টান দেবার ঘনত্ব বেড়ে বেড়ে যায়। আমি কথা বলতেই থাকি বলতেই থাকি, আমার কথা বলার নেশা পেয়ে বসে, আমার বন্ধু হাসতে থাকে আমার কান্ড দেখে, আমি টান দিয়ে চলি, আর রেগে উঠি তার ওপর। বিশ্বাস হয় না তোর, সত্যিই দেখ আমার কিছুই হয় নি, তারপর আমার কথা বলা আরও বেড়ে যায়, আমার নেশা হয় নি, প্রমাণস্বরূপ নিউটনের তিনটা সুত্রই আমি এক এক করে আউড়ে যাই, প্রথমে বাংলায় আর তারপরে ইংরেজিতে, নির্ভুলভাবে। আমার বন্ধু তবু হাসে, আমি ক্ষেপে উঠি, হাতে কাগজ কলম নিয়ে তেড়ে গিয়ে ওকে সুত্রের প্রমাণ বোঝাতে যাই, কিন্তু আমার হাত টলে যায়, আমি কথা বলতেই থাকি, একসময় মেঝেতে বিছানো তোষকের ভেতরে ডুবে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে পড়তে পড়তে হয়ত আমি সুত্র গুলিয়ে ফেলি।
ইলিয়াস পড়ার সময় এরকম টলটলে একটা অনুভূতি হয় মনে। এরকম গদ্যের আলাদা একটা বিটকেলে গন্ধ আছে, খুব গভীর মনে পড়লে বইয়ের হরফ থেকে ছেলেবেলার সমান দুরত্ব পেরিয়ে সেই গন্ধ চোখের সামনে মায়াবতী কোন পর্দা দুলিয়ে দেয়।
আবার একটানা পড়ে গেলে মনের ভেতরে চাপও পড়ে বেশ। অসময়ে জ্বরে পড়লে যখন মা জোর করে গায়ের উপর ভারী কোন কাঁথা চাপিয়ে দিতেন, ঠিক সেরকম একটা চাপ। একেকটা গল্পের একেকটা লাইন পেরিয়ে গেলে, সীমান্তজয়ী বীরের মতন আনন্দে বুকটা ভরে ভরে ওঠে।
কোন কোন সময় থাকতো, যখন এই ঘোর লাগা জ্বরকেই বড় বেশি আপন মনে হতো, ইচ্ছে হতো, এরকম ঘোর নিয়েই কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকি দিনের পর দিন। কোন কোন মাথাব্যথা ভাল লেগে যায়, ঠিক ইলিয়াসের গল্পেরই মতন।
যখন মাঝে মাঝে বুড়ো মানুষের মতন ভাবি, জীবনের স্বার্থকতা কিসে? রোমান সাম্রাজ্যের পুরোটা জিতে নেয়া, অথবা গোঁয়ারের মতন একটা পতাকা গেঁড়ে দেয়া হিমালয়ের চূড়ায়?জানি না।
শুধু প্রার্থনা এই, হে প্রভু, যদি অনাবাদী দুঃখে মরে না যাই, তাহলে বখতিয়ারের সপ্তদশ অশ্বারোহীর মত বলশালী ইলিয়াসের এরকম ২৮ টি গল্প যেন আমি লিখে যেতে পারি।
Read More
Was this review helpful to you?
By Shahiduzzaman,
10 Oct 2021
Verified Purchase
?
Read More
Was this review helpful to you?
By শেখ আনিচুর রহমান,
09 Mar 2017
Verified Purchase
#রিভিউ বই: আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র ১ লেখক: আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রকাশক: মাওলা ব্রাদার্স প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৪০৪ (শেষের জীবনপঞ্জি বাদে) দাম: তিনশত টাকা মাত্র (জানু: ২০১০) আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলাসাহিত্যের সেই বিরল সাহিত্যিকদের অন্যতম যারা বেশি লিখেন নি, কিন্তু গুণগতমান বিচারে যাদের লেখা অনন্যসাধারণ, ওজস্বী। বাংলাসাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠকমাত্রেই উনার বিখ্যাত দুই উপন্যাস 'চিলেকোঠার সেপাই' ও 'খোয়াবনামা'র নাম জানেন। তবে উপন্যাসের বাইরে তিনি অল্পকিছু ছোটগল্প লিখেছেন যেগুলো নিজ নিজ গুণে ঋদ্ধ। এ বইয়ে তাঁর বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত আটাশটি গল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাঁর গল্পগুলো তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশক্তি, গভীর জীবনবোধ ও ধারালো রসবোধে সমৃদ্ধ। . বইটি 'নিরুদ্দেশ যাত্রা' নামক গল্প দিয়ে শুরু এবং 'রেইনকোট' নামক গল্প দিয়ে শেষ হয়েছে। তারপরে সংযুক্ত হয়েছে লেখকের জীবনপঞ্জি। এ বইয়ের 'মিলির হাতে স্টেনগান', 'দোজখের ওম' বেশ জনপ্রিয় ও প্রশংসিত ছোটগল্প, যদিও সবচে' বিখ্যাত ছোটগল্প হচ্ছে 'দুধভাতে উৎপাত'। 'দুধভাতে উৎপাত' গল্পে ওহিদুল্লা নামক একটি ছেলের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা বর্ণিত হয়েছে। ওহিদুল্লার বাবা কসিমুদ্দিন, তিনি বহু দূরে তিস্তাপারের এক গ্রামে গ্রামপ্রধানের বাড়িতে থাকেন, বাড়ির মক্তবে ছেলেমেয়েদের আমপারা-সেপারা পড়ান, মসজিদে আজান দেন আর ফিবছর কোরবানির সময়ে কসাইয়ের ভূমিকা পালন করেন। বছরে একবার বাড়িতে ফেরেন, কোরবানির পরে, আর ডেকচি ভর্তি গোশত নিয়ে আসেন। গরীবের সংসারে তখন উৎসবের আমেজ। কসিমুদ্দিনের স্ত্রী জয়নাব, তাঁদের ছোট ছোট অনেকগুলো ছেলেমেয়ে। অভাবের সংসারে একটি কালো গাই থাকাতে দুধ বিক্রির টাকা দিয়েই সংসারের ব্যয় নির্বাহ হত। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে খেয়ে বাঁচার জন্য বাধ্য হয়ে গাইটি গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন লোক হাশমত মুহুরির কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। গল্পের শুরুতেই ওহিদুল্লার নাজুক অবস্থা বুঝানো হয়েছে। ওদিকে জয়নাব খুব অসুস্থ, ওহিদুল্লার বড়আম্মা হামিদাবিবি তাঁর শুশ্রূষায় ব্যস্ত। জয়নাব অসুস্থ অবস্থায় দুধের বায়না ধরে, কালা গাইয়ের জন্য আফসোস করে। এদিকে দুধের আকাল, তাই ওহিদুল্লা বাধ্য হয়ে মুহুরির বাড়িতে হাজির হয়। কিন্তু মুহুরির বাড়িতে শহর থেকে ছেলে আর ছেলেবউ-নাতনী আসাতে তারা দুধ দিতে অপারগ হয়, উল্টো অনেক কটুকথা শুনিয়ে দেয়। এদিকে জয়নাবের অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ থেকে খারাপের দিকে যায়। এর পরের অংশটুকু গরীব, অসহায় পরিবারের অনিবার্য বেদনারসে সিক্ত হওয়ার। দারিদ্র্যের কারণে মানুষদের কতটা অসহায় পরিণতি বরণ করে নিতে হয়, দারিদ্র্যের কারণে সমাজে মানুষদের অপাংক্তেয় হয়ে কত কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয় তার উজ্জ্বল বর্ণনা মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে ছোটগল্পটিতে। . আখতারুজ্জামান ইলিয়াস মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে একটি ওজস্ব উপন্যাস লিখতে চেয়েছিলেন, যদিও মরণব্যাধি তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি। তবে তিনি কয়েকটি ছোটগল্প লিখেছেন যা মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধপরবর্তী সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ধারণ করেছে। 'মিলির হাতে স্টেনগান', 'অন্য ঘরে অন্য স্বর', 'প্রতিশোধ', 'খোঁয়ারি', 'রেইনকোট' এমনই কিছু গল্প। এর মধ্যে রেইনকোট ছোটগল্পটি বর্তমান উচ্চমাধ্যমিকের বইয়ে সংকলিত হয়েছে। রেইনকোট মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন পাকবাহিনীর এবং তাদের এদেশের দোসরদের অত্যাচারের গল্প, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গল্প। এই চেতনার বলে বলীয়ান হয়েই ভীতু কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদা মিলিটারির শত অত্যাচারেও তাঁর মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরে স্বীকার করেন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ঠিকানা জানেন, কিন্তু তাদেরকে অবহিত করেন না। বরং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের কাল্পনিক ধারণায় তিনিও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বলে বলীয়ান হন, সকল ভীরুতা উবে যায়। . আখতারুজ্জামান ইলিয়াস জীবনকে নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং তাঁর লেখায় তা বেপরোয়াভাবে প্রকাশ করেছেন। তাই তাঁর স্ল্যাং ব্যবহার-ও হয়ে ওঠে শিল্পের ব্যঞ্জনায় অনুপম। আরেকটা ব্যাপার বেশ লক্ষণীয়, তিনি তাঁর গদ্যে প্রচুর ইংরেজি শব্দের ব্যবহার করেছেন, অনেক পাঠকের কাছেই তা অদ্ভুত লাগতে পারে। এমনকি তিনি ইংরেজি-বাংলার যুগল ব্যবহার-ও বেশ সার্থকভাবে করেছেন- উদাহরণস্বরূপ: 'আমারি জন্য তৈরি এরকম লোনলী-লগ্ন আমি কতোদিন পাইনি, কতোকাল, কোনোদিন নয়।' ( নিরুদ্দেশ যাত্রা)। এরকম আরেকটা শব্দ দেখেছি, 'মেমোরি-মর্মরিত'! লেখকের দুয়েকটা গল্পের প্লট খুবই ছোট, কিন্ত বর্ণনার ঋজুতায় তা গভীর। 'নিরুদ্দেশ যাত্রা' গল্প থেকে আরেকটু বর্ণনা: 'বৃষ্টি-বুনোট এইসব রাতে আমার ঘুম আসে না, বৃষ্টিকে ভারি অন্যরকম মনে হয়, বৃষ্টি একজন অচিন দীর্ঘশ্বাস।' 'সন্ধেবেলা আম্মার ঘরে যখন যাচ্ছি, আকাশ কালো, রাস্তার মানুষজন নেই, চারটে জানলায় আমাদের পাতাবাহারের ছায়া লুফে নিয়ে পালিয়ে গেলো দুটো ফক্সওয়াগন, কাক আর বাদুড়েরা চিৎকার করে উঠলো ; আমার মনে হলো আজ আমি একটুও ঘুমোতে পারবোনা।' এইসব ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ, আমি অর্বাচীন কী রেটিং দিবো! বিচিত্র স্বাদের আটাশটি ছোটগল্প পড়ুন, হারিয়ে যান অনুপম গদ্যে, মজে যান সাহিত্যরসে। শুভ পঠনপাঠন হোক... :-)