"শেষের কবিতা" বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ শেষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথের চিত্রসৃষ্টি পর্যায়ের দ্বিতীয় উপন্যাস (প্রথমটি যোগাযোগ) এটি। ১৯২৭ সাল (১... See more
TK. 150 TK. 129 You Save TK. 21 (14%)
দুঃখিত, বইটি বর্তমানে আমাদের ও প্রকাশনীর স্টকে নেই, নতুন স্টক এলে পুনরায় অর্ডার নেওয়া হবে। রিস্টক নোটিফিকেশন পেতে Request for Reprint বাটন ক্লিক করুন
"শেষের কবিতা" বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ শেষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথের চিত্রসৃষ্টি পর্যায়ের দ্বিতীয় উপন্যাস (প্রথমটি যোগাযোগ) এটি। ১৯২৭ সাল (১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ভাদ্র) থেকে ১৯২৮ সাল (১৩৩৪ বঙ্গাব্দের চৈত্র) অবধি প্রবাসীতে ধারাবাহিকভাবে রচনাটি প্রকাশিত হয়। শেষের কবিতা বিংশ শতকের বাংলার নবশিক্ষিত অভিজাত সমাজের জীবনকথা। ব্যক্তি মানুষের মূল্যচেতনার উপাদান যদি অন্তর থেকে শুধুই বার হয়ে আসতে থাকে - যার সমুন্নতি ও দীপ্তি বিদ্যার বৃহৎ পরিমার্জনায়, তারও একটা চরিত্র আছে। বাস্তব চেনাশোনার চলা বাহ্যিক অভিজ্ঞতার জগৎ থেকে তা একেবারে অন্তর অভিমুখী। এই নবতর চেতনার অদ্ভুত আবিষ্কার এই উপন্যাস রচনার কাছাকাছি সময়ে। রবীন্দ্রনাথের অঙ্কিত এই পর্বের দু-একটি মুখাবয়বে কল্পনার প্রাধান্য লক্ষণীয়। লেখা ও প্রকাশের দিক থেকে শেষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দশম উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি লেখেন ১৯২৮ সালে ব্যাঙ্গালোরে, স্বাস্থ্য উদ্ধারের প্রয়াসে সেখানে থাকবার সময়ে। শেষের কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় প্রবাসী’তে, ধারাবাহিকভাবে ভাদ্র থেকে চৈত্র পর্যন্ত। অনেকে একে কবিতার বই ভেবে ভুল করে। আদতে এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম রোমান্টিক উপন্যাস ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বইয়ের রিভিউ লেখা এক ধরণের ধৃষ্ঠতাই বলা চলে। ক্লাসিক বই তো। রিভিউ লেখা মোটামুটি সাহসের ব্যাপার! যা হোক, তবুও শুরু করছি। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।
কাহিনী...... কাহিনীর নায়কের নাম অমিত রায়। বিদেশ থেকে ব্যারিস্টার হয়ে ফিরেছে। দেখতে সুদর্শন, বুদ্ধিমান, পোষাকেও বেশ একটা ভালো মান মেইন্টেইন করে সে। কিন্তু পেশায় উকিল হলেও অমিত খুব সাহিত্যপ্রেমি একজন মানুষ। পড়াশোনা করতে ভালোবাসে। কবিতা তার বিশেষ পছন্দের জিনিস। অমিত’র চরিত্রটা অনেকটা ঐ “টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না” টাইপ। একবার ঘটনাচক্রে এক দূর পাহাড়ের দেশে তার পরিচয় হয় লাবন্যের সাথে। লাবন্য খুব সাধারণ গরীব মধ্যবিত্ত মন মানসিকতার মেয়ে। শহুরে মেয়েদের মত রঙ ঢঙ্গের বাহার নেই। অদ্ভুত সরল সে। সেই সাথে যথেষ্ঠ আত্মমর্যাদাশীল। লাবন্যের এই দিকগুলোই তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে। অন্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অমিতও মুগ্ধ হয়। ভালোবেসে ফেলে সে। সবমিলিয়ে কাহিনী খুব সুন্দর। কিন্তু এখনকার সেলফোনে প্রেম করা প্রেমিক সমাজের কাছে কেমন লাগবে জানিনা। হয়ত অনেকের কাছে খুব নরমাল মনে হতে পারে। মনে হতে পারে খুব সাধারণ প্রেম কাহিনী। কিন্তু ভাই, এখন হয়ত আপনাদের কাছে এই গল্প সাধারণ মনে হচ্ছে। ১৯২৮ সালে এটি সাধারণ ছিল না। এরকম রোমান্টিকতা তৎকালীন সময়ে খুব কম লেখনিতেই পাওয়া যেত।
গল্পের চরিত্রের কথা...... প্রধান চরিত্রের নাম অমিত ও লাবন্য। অমিতের চরিত্র সম্পর্কে লেখক নিজেই বড়সড় ধরণের একটা ফিরিস্তি দিয়েছে উপন্যাসের প্রথম কয়েক পাতাতেই। তাই রিভিউদাতা হিসেবে আমার তেমন কিছুই বলার নেই। তবে কিছু ব্যাপার না বললেই নয়... অমিত চরিত্রটি বেশ আধুনিক একটি চরিত্র। এবং সেটা সম্পূর্ণভাবেই। রবি ঠাকুর তাঁর অধিকাংশ গল্পেই প্রধান পুরুষ চরিত্রটিকে এক ধরনের নিরপেক্ষতা অবলম্বণ করিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে অমিতকে আরও কিছু গুণ দেয়া হয়েছে। এমন কিছু গুণ যা আমাদের বাঙ্গালী সমাজের মেয়েরা চোখ বন্ধ করে পছন্দ করে ফেলবে। বলা যায় অমিত অনেকটা মেয়েদের স্বপ্নের পুরুষের মত। যেমন চেহারা, তেমন স্টাইলিস্ট, তেমন পড়াশোনা আর ঠিক তেমনই পয়সাওয়ালা উচ্চ রুচিবান ও উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে। আর লাবন্য অনেকটা সাধাসিধে জীবনের অধিকারিণী। স্বল্পভাষী, লাজুক, পরিষ্কার মনের মেয়ে সে। তবে সেই সাথে খুব বাস্তববাদী। যা অমিত নয়। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে শেষের কবিতা’র চরিত্রগুলো খুব সাধারণ মনে হলেও অদ্ভুত এক গভীরতা লক্ষ্য করা যায় চরিত্রগুলোর ভেতর। বিশেষ করে লাবন্য’র ভেতর। আমাদের সমাজের একদল শ্রেনীর মেয়েদের মন ও মানসিকতার প্রতিচ্ছবি এই লাবন্য। এই সেই সমাজের মেয়ে যারা এখনো নিজেদের শিকল ছিড়তে পারে না সমাজের ভয়ে। যারা কোনকিছু পছন্দ করলে শুধু শুধু মনে মনেই তাকে ভালোবেসে যায়, নিজের করে পায় না। উপন্যাসটি শেষ অনেকেই হয়ত লাবন্য চরিত্রটির উপর ক্ষোভ প্রকাশ করবেন, কিন্তু একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবলেই বুঝতে পারবেন কি অসাধারণ গভীরতা রয়েছে চরিত্রটির মধ্যে। অন্যদিকে অমিত চরিত্রটিও কম যায় না। তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজে এত আধুনিক হয়েও নিজের অবস্থাকে পরিবর্তণ করতে পারেনি সে। সমাজের মায়াডোরে সেও বন্দি। তাই দিনশেষে তাঁর গল্পও এক।
এবার বলি লেখনীর কথা......... শেষের কবিতা রবি ঠাকুরের শেষ দিকের উপন্যাস। হ্যাঁ। উপন্যাস। কবিতা না। এখনো আমাদের সমাজের অনেকেই নাম শুনে এই রচনাকে কবিতা বলে ধরে নেয়। একবার আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, নিষিদ্ধ প্রেম ছাড়া প্রেমের উপন্যাস হয় না। রবীন্দ্রনাথ তাঁর অধিকাংশ উপন্যাসেই নিষদ্ধ প্রেমটা বেশ ফলাও করে এনেছেন। চোখের বালি, ঘরে-বাইরে, নৌকাডুবি... নিষিদ্ধ প্রেম ছাড়া কোন কথা নেই। ওর ওই কথাটা পুরোপুরি ফেলে দিতে পারিনি সেদিন। একদিক থেকে বিবেচনা করলে ব্যাপারটা সেরকমই দাঁড়ায়। তবে “শেষের কবিতা” সেরকম কিছু না। এটি বলতে গেলে এক ধরণের নির্ভেজাল প্রেমের উপন্যাস। এবং সেটি যেমন তেমন প্রেম না, গভীর আবেগ মিশ্রিত হৃদয় নাড়িয়ে দেবার মত প্রেম।
আলোচ্য গল্পের আরো একটি মজার দিক হচ্ছে এটির অনুকবিতাগুলো। গল্পের মাঝে মাঝে অমিত ও লাবন্যের একে অপরকে শোনানো কবিতাগুলো পাঠক মনে এক অদ্ভুত রোমান্টিক একটা আমেজ সৃষ্টি করে। আর এসবকিছুই হয়েছে শুধু মাত্র উপন্যাসটির লেখক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে। এমন আমেজ সৃষ্টি করা একমাত্র তাঁর হাতেই সম্ভব।
সবশেষে এটাই বলবো, শেষের কবিতা খুবই সাম্প্রতিক বিষয়বস্তুভিত্তিক একটি উপন্যাস। নির্ভেজাল প্রেমের পাশাপাশি এখানে উঠে এসেছে বাংলার নবশিক্ষিত অভিজাত সমাজের জীবনকথা। ব্যক্তি মানুষের মূল্যচেতনার উপাদান যদি অন্তর থেকে শুধুই বার হয়ে আসতে থাকে - যার সমুন্নতি ও দীপ্তি বিদ্যার বৃহৎ পরিমার্জনায়, তারও একটা চরিত্র আছে। বাস্তব চেনাশোনার চলা বাহ্যিক অভিজ্ঞতার জগৎ থেকে তা একেবারে অন্তর অভিমুখী। এই নবতর চেতনার অদ্ভুত আবিষ্কার এই উপন্যাস রচনার কাছাকাছি সময়ে। যারা এখনো বইটি পড়েন নি, দ্রুত পড়ে ফেলুন। পড়লেই বুঝবেন, উপন্যাসটি শুধু শুধু কালজয়ী হয় নি। আর হ্যাঁ। ভয় পাবেন না। উপন্যাসটি চলিতভাষায় লেখা। বেশ সহজেই পড়তে পারবেন!
ধন্যবাদ!
হে বন্ধু, বিদায়!
প্রিয় উক্তিঃ শেষের কবিতা উপন্যাসে রবি ঠাকুরের অসাধারণ কিছু উক্তি আছে, আছে কিছু অসাধারণ চিত্র বর্নণা...
১. " অমিত বলে, ফ্যাশানটা হল মুখোশ, স্টাইলটা হল মুখশ্রী। ওর মতে, যারা সাহিত্যের ওমরাও দলের, যারা নিজের মন রেখে চলে, স্টাইল তাদেরই। আর যারা আমলা দলের, দশের মন রাখা যাদের ব্যবসা, ফ্যাশান তাদেরই। ... কানাত হল ফ্যাশানের, বেনারসি হল স্টাইলের - বিশেষের মুখ বিশেষ রঙের ছায়ায় দেখবার জন্যে।"
২. " কমল-হীরের পাথরটাকে বলে বিদ্যে , আর ওর থেকে যে আলো ঠিকরে পড়ে ,তাকে বলে কালচার।পাথরের ভার আছে, আলোর আছে দীপ্তি।"
৩. " সায়াহ্নের এই পৃথিবী যেমন অস্ত-রশ্মি-উদ্ভাসিত আকাশের দিকে নি:শব্দে আপন মুখ তুলে ধরেছে, তেমনি নীরবে, তেমনি শান্ত দীপ্তিতে লাবণ্য আপন মুখ তুলে ধরলে অমিতের নতমুখের দিকে।"
৪. " সেইখানে পশ্চিমের দিকে মুখ করে দুজনে দাঁড়ালো। অমিত লাবণ্যের মাথা বুকে টেনে নিয়ে তার মুখটি উপরে তুলে ধরল। লাবণ্যের চোখ অর্ধেক বোজা, কোণ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।"
প্রিয় পংক্তিঃ আগেই বলেছি উপন্যাসের মাঝে মাঝে বেশ কিছু ছোট বড় কবিতা আছে... তাঁর মধ্যে সব থেকে ভালো লাগার জায়গা গুলো হলো...
২. “For God’s sake, hold your tongue and let me love!”
৩. কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও। তারি রথ নিত্যই উধাও জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন, চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন। ওগো বন্ধু, সেই ধাবমান কাল জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেরি তার জাল-- তুলে নিল দ্রুতরথে দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে তোমা হতে বহু দূরে। মনে হয়, অজস্র মৃত্যুরে পার হয়ে আসিলাম আজি নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায়-- রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায় আমার পুরানো নাম। ফিরিবার পথ নাহি; দূর হতে যদি দেখ চাহি পারিবে না চিনিতে আমায়। হে বন্ধু, বিদায়।
রেটিংঃ ৪.৫/৫
Read More
Was this review helpful to you?
By Aam somik,
28 Sep 2016
Verified Purchase
বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।তার লেখা “শেষের কবিতা” উপন্যাসটি বাংলার নবশিক্ষিত অভিজাত সমাজের জীবনকথা। ব্যক্তি মানুষের মূল্যচেতনার উপাদান যদি অন্তর থেকে শুধুই বার হয়ে আসতে থাকে - যার সমুন্নতি ও দীপ্তি বিদ্যার বৃহৎ পরিমার্জনায়, তারও একটা চরিত্র আছে। বাস্তব চেনাশোনার চলা বাহ্যিক অভিজ্ঞতার জগৎ থেকে তা একেবারে অন্তর অভিমুখী। এই নবতর চেতনার অদ্ভুত আবিষ্কার এই উপন্যাস রচনার কাছাকাছি সময়ে। রবীন্দ্রনাথের অঙ্কিত এই পর্বের দু-একটি মুখাবয়বে কল্পনার প্রাধান্য লক্ষণীয়।উপন্যাসটির কাহিনী সংক্ষেপঃ-শিলং পাহাড়ের পথে বিপরীতমুখী দুটি গাড়ির পরস্পর আকস্মিক দুর্ঘটনায় পরিচয় হয় বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় ও লাবণ্যর। নির্জন পাহাড়ের সবুজ অরণ্য ঘেরা দুর্লভ অবসরে দু'জন দু'জনকে দেখে মুগ্ধ হয়। যার পরিণতি দাঁড়ায় শেষ পর্যন্ত ভালোবাসায়। যেখানে নির্ধারিত ছিল যে লাবণ্য বই পড়বে আর পাশ করবে, এমনি করেই তাঁর জীবন কাটবে। সে হঠাৎ দেখতে পেল সে-ও ভালোবাসতে পারে। আর অমিত যেখানে মেয়েদের কাছে সোনার রঙের দিগন্ত রেখা- ধরা দিয়েই আছে, তবু ধরা দেয় না। রুচির তৃঞ্চা মিটিয়ে কত সুন্দরী মেয়েদের পাশ কাটিয়ে এসেছে এতকাল। সেই বন্দি হলো লাবণ্য প্রেমে।শিলংয়ের পাহাড়ি পথে ঘুরে ঘুরে ওদের বেশ ভালোই সময় কাটে- গান গেয়ে, আবৃত্তি শুনে, পাখি দেখে। প্রকৃতি যেন ওদের ভালোবাসার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। এমন সময় অমিত লাবণ্যকে বিয়ে করতে অস্থির হয়ে উঠে। কিন্তু লাবণ্যর মন তাতে সায় দেয় না। লাবণ্য ও অমিতের মধ্যে তখন শুরু হয় ব্যক্তিত্বের সংঘাত। অনেক তর্ক-বিতর্ক, মান-অভিমানের পর অমিত লাবণ্যর ভালোবাসা যখন অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে হঠাৎ করেই তখন ওদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। এবং সেই সময় অমিতের বোন সিসি ও তাঁর বন্ধু কেতকী শিলং এসে উপস্থিত হয়।কেতকীর সঙ্গে বিলেতে থাকার সময় অমিতের একটা গভীর মুগ্ধতার সম্পর্ক ছিল। এবং সে সময়টাতে অমিত কেতকীকে ভালোবেসে যে আংটি পরিয়েছিল, লাবণ্যর সঙ্গে অমিতের বিয়ের খবর শুনে কেতকী সে আংটি খুলে অশ্রুসিক্ত নয়নে শিলং ছেড়ে চেরাপুঞ্জি চলে যায়। অমিত যে আংটিটি লাবণ্যকে পরিয়ে ছিল সেটিও সে খুলে দেয় অমিতের হাতে। অমিত কি করবে ভেবে পায় না।লাবণ্যর পরামর্শে অমিত চেরাপুঞ্জি যায় কেতকীদের ওখানে। কদিন পর ফিরে এসে দেখে লাবণ্য চলে গেছে শিলং ছেড়ে। কোনো ঠিকানা রেখে যায়নি। এক সময় অমিত ফিরে যায় কলকাতায়। তারও কিছুকাল পরে অমিতের সঙ্গে বিয়ে হয় কেতকীর। এর মধ্যে লাবণ্যর একটি চিঠি আসে অমিতের কাছে। সে চিঠিতে লেখা- ছয়মাস পর রামগড় পর্বতের শিখরে শোভনলালের সঙ্গে লাবণ্যর বিয়ে। প্রথম যৌবনে শোভনলাল লাবণ্যকে ভালোবেসে ছিল; কিন্তু লাবণ্যর অবজ্ঞা ও অপমানে শোভন দূরে চলে যায়। এক সময় শোভনলালকে বরদান করবে বলেই লাবণ্য নিজের অগোচরে অপেক্ষা করে বসে ছিল এতকাল, আর এখন সেই শোভনলালই শেষ পর্যন্ত এলো তাঁর জীবনে।এক কথায় বলতে গেলে অসাধারন লেখুনী।বইটা পড়া শুরু করে শেষ না করে উঠতেই পারলাম না।অন্যরকম এক ভাল লাগা রয়েছে বইটিতে।যারা পড়েননি বলব মিস করেছেন।