“শুকতারার ১০১ ভূতের গল্প” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপের কথা:
ভূতের গল্প! নামটা শুনলেই যেন কেমন গা ছমছম করে ওঠে। যারা ভয়কাতুরে তাদের তো কথাই নেই, যারা মুখে খুব সাহস দেখায় তারাও যে ভূতের গল্প পড়তে বসলে কেমন ভয়ে কুঁকড়ে যায়, সে আমরা সবাই জানি। শুধু ছোেটরাই বা কেন, যে-সব বড়োর হাতে ভূতের গল্পের বই দেখলে ধমকান, তারাও কিন্তু ছোটদের লুকিয়ে পড়ে নেন। ভূতের গল্প। এ গল্পের আকর্ষণ এরকমই, বয়সের কোনো বাছবিচার নেই। এখানে, বারো থেকে বাহাত্তর সকলেই এসব গল্পের ভক্ত।
সেই জন্যেই নানারকমের ভূতের গল্প জড়ো করা হয়েছে এখানে। শুকতারা পত্রিকায় এই তেষট্টি বছর ধরে ভূতের গল্প তো আর কম প্রকাশিত হয়নি। আর লিখেছেনও সব বাঘা বাঘা লেখক। এদের মধ্যে যেমন আছেন আগেকার দিনের হেমেন্দ্ৰকুমার রায়, সুধীন্দ্রনাথ রাহা, যোগেশচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়, সরোজকুমার রায়চৌধুরী, আশাপূর্ণ দেবী, স্বপন বুড়ো, বিশু মুখোপাধ্যায় কি ধীরেন্দ্রলাল ধরের মতো সেরা গল্পকার, তেমনি আছেন একালের মহাশ্বেতা দেবী, বিমল কর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, প্রফুল্ল রায় বা সুচিত্ৰা ভট্টাচার্যের মতো পাকা, গল্প-লিখিয়েরা। নাম যাদের করলাম না, ভূতের গল্প পড়ুয়াদের কাছে তাদের নামও দস্তুর মতো পরিচিত।
এইরকম একশো এক গল্পকে বন্দি করা হয়েছে এই বইয়ের দুই মলাটের মধ্যে। ভূতেরা সব তোমাদের সঙ্গে আলাপ করার জন্যে ছটফট করছে, কাজেই আর বিলম্ব নয়, পাতা ওলটাতে শুরু করো।
ভূমিকা:
একটা শিশু-কিশোর পত্রিকার তেষট্টি বছর টিকে থাকা নেহাৎ কথার কথা নয়। ‘শুকতারা’ পত্রিকা শুধু যে এত বছর ধরে টিকে আছে তাই নয়, গৌরবের সঙ্গে টিকে আছে এবং এখনও তার যেরকম রমরমা পশার, আরো অনেক বছর ধরে টিকে থাকবে এটাও প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।
‘শুকতারা” যখন প্রথম প্রকাশিত হয় তখন তার সঙ্গে সত্যি সত্যি টেক্কা দেবার মতো পত্রিকা ছিল দুটি-শিশুসাথী’ আর ‘মৌচাক”। আজ প্রথমটির কোনো অস্তিত্বই নেই, দ্বিতীয়টিরও প্রায় তাই। এখন ছোটদের পত্রিকা আশেপাশে কিছু আছে বটে, কিন্তু ‘শুকতারা’ যে-জন্যে সকলের পছন্দ সেই জায়গাটা পূরণ করার ক্ষমতা তাদের তেমন আছে বলে মনে হয় না। কী সেই জায়গা যেখানে এই পত্রিকা দাপটের সঙ্গে দখল করে বসে আছে! সেটা হল ছোটদের মনের মতো বিভিন্ন স্বাদের প্রচুর গল্প। এই সব গল্প দিয়েই ‘শুকতারা” মুগ্ধ করে এসেছে ছোটদের, তাদের অভিভাবকদের; এখনও তাই করছে।
নানা ধরনের গল্পের মধ্যে ভূতের গল্প বরাবরই ‘শুকতারা’ পত্রিকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। তাই বছরে দু’বার বিশেষ ভৌতিক সংখ্যাও করা হয়। এতদিন ধরে প্রকাশিত এত রকমের ভূতের গল্পের মধ্যে একশো এক গল্পের নির্বাচন খুব সহজ ব্যাপার নয়, কারণ এযাবৎকাল ‘শুকতারা’ পত্রিকায় যাঁরা ভৌতিক গল্প লিখে এসেছেন তারা এক-একজন দিকপাল মানুষ। তাদের প্রকাশিত বেশ কিছু গল্পের মধ্যে একটি গল্প বেছে নেওয়া খুবই কষ্টের কাজ, কোন গল্পটি নিলে ভালো হত; সে ব্যাপারে একটা অস্বস্তি থেকেই যায়। এঁদের পর থেকে আরো বেশ কিছু লেখক এসেছেন, ছোটদের গল্পেই বিশেষ করে যাঁদের মুন্সিয়ানা। আর আজকের যারা নিয়মিত লেখক তাদের মধ্যে অনেকেও ছোটদের বিশেষ প্রিয় লেখক হয়ে উঠেছেন। কাজেই প্রায় তিন প্রজন্মের লেখকদের গল্প দিয়ে ‘শুকতারা’ পত্রিকার একটা শ্ৰেষ্ঠ ভূতের গল্পের সংকলন করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পারছি কাজটা মোটেই সহজ নয়। সহজ হবেই বা কী করে! একেবারে প্রথম দিকের এমন সব লেখক ছিলেন যাদের বলা যায় ভৌতিক গল্পের জাদুকর। আজকের প্রবীণরা নতুন কোনো সংকলন বেরুলে তাদের লেখার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এই সব লেখক হলেন হেমেন্দ্ৰকুমার রায়, সুধীন্দ্রনাথ রাহা, যোগেশচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, সরোজকুমার রায়চৌধুরী প্রমুখ। এরপর নতুন স্বাদের গল্প নিয়ে এলেন অখিল নিয়োগী (স্বপন বুড়ো), ধীরেন্দ্রলাল ধর, আশাপূর্ণ দেবী, মহাশ্বেতা দেবী, হাড়-হিম-করা বিদেশি গল্প নিয়ে এলেন বিশু মুখোপাধ্যায়। তারপর যাঁরা এলেন আজ অবশ্য র্তারাও প্ৰবীণা-ছোটদের প্রিয় লেখক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ, প্রফুল্ল রায়, হিমানীশ গোস্বামী, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নিমাই ভট্টাচার্য, সঙ্কর্ষণ রায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, অদ্রীশ বর্ধন এবং আরো অনেকে। এখন যাঁরা ছোটদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন তাদের সংখ্যাও কম নয়। এর মধ্যে একশো এক জন লেখককে বেছে নেওয়া এবং তঁদের সেরা গল্পটি উপহার দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ কাজ। এই দুরূহ কাজ সুসম্পন্ন করার জন্য অনেকের সাহায্যই দরকার। সকলে মিলে এই কাজে এগিয়ে না এলে এরকম একটি সংকলন প্রকাশ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে এঁদের মধ্যে বিশেষ ভাবে যার নাম করতেই হবে তিনি বিশিষ্ট ছড়ালেখক এবং ছোটগল্পকার শ্ৰীরূপক চট্টরাজ। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া আমাদের এই পরিকল্পনা সার্থক রূপ নিতে পারত না। সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় যে সংকলনটি প্রকাশিত হল সেটি ছোটদের মন জয় করতে পারলেই আমাদের উদ্যোগ এবং শ্রম সার্থক বলে মনে করব।
সূচীপত্র:
* বাড়ি, বুড়ো, বুট
* গোলদিঘির ভূত
* ভৌতিক
* ঐতিহাসিক প্রেতাত্মা
* পরলোকের হাঁড়ির খবর
* একটি ভালোমানুষ ভূত
* মরা বোন ও ভূতুড়ে পাইন
* অশরীরীর স্বাক্ষর
* আম কুড়োতে সাবধান
* ঠাকুমার পোষা ভূত
* বিপিনবাবুর চশমা
* ভূত নেই, ভূত আছে
* এক ভৌতিক মালগাড়ি আর গার্ডসাহেব
* শিবেনবাবু ভালো আছেন তো
* রতনদিয়ার ভূত
* লোকটা কে
* কে হাসে?
* মর্গান সাহেবের বাগান
* প্রেতাত্মার অট্টহাসি
* ভূতূড়ে বাড়িতে ভূতের খোঁজে
* ভূতের খপ্পরে
* বুড়ির ভূত
* জলের দেবতা এবং ভূত
* পাতালের মাতুল
* প্রেতের কান্না
* অবিশ্বাস্য
* মড়ার খুলি ও মামা
* সেই রাতে
* গিরিধারীর গেরো
* সঙ্কেত
* লগ্ বুকের ছেঁড়া পাতা
* আত্মা ও দুরাত্মা
* যাদের দেখা যায় না
* টোকোনের বন্ধু
* আয়নার কুহক
* মামীমা
* ভূতেরা এখন
* তেলেসমাতি বাড়ি
* অলৌকিক জিপ
* জয়ের দাদু
* সিকান্দার বেগের প্রতিকৃতি
* গভীর রাতের আতঙ্ক
* চশমা
* ঠিক দশটায় ট্রেন এসেছিল
* ভূতের যদি থাকে খুঁৎ
* কানে কানে কথা কয়
* ২৫ বছর পরে
* রহস্যময় ঘোড়ার গাড়ি
* কথার দাম
* হ্যাপি ভিলা
* শীতসন্ধ্যার ঝড়বৃষ্টি
* নস্যির ডিবে
* ভূত বলে কিছু নেই
* বাঁশি হাতে মানুষটি
* কাশিমপুরের তিন ভূত
* আত্মা মরে না
* মাতৃস্নেহ
* কাটা হাতের লোভে
* বেক্ষদৈত্য
* প্রতিধ্বনি
* ভয়ংকর
* জবানবন্দী
* যমজ বোন
* অশরীরী নিবাসের কাহিনি
* ইম্ফলের ফৌজি গাড়ি এবং অনুপমদা
* নির্জন ফরেস্ট বাংলোয়
* অশরীরিণী
* সীতা বামনী
* দেখা হবে মাঝরাতে
* লঙসাহেবের ছায়া
* কালো বিভীষিকা
* শয়তানের জাগরণ
* মায়ার টানে
* আমাদের ভুবন স্যার
* রাজাপুরের দীঘি
* আমার বন্ধু বিল্ব
* চচ্চড়ি – ভূত
* আজব দোকান
* গল্প নয়
* জলার ভূত
* রাঙাদিদা ও ফুলকুমারী
* অদ্ভুত ভূতের গল্প
* ম্যাজিশিয়ান
* ভূত মানেই ভয়ঙ্কর নয়
* জাতিস্ময় ভূত
* একটা চাবির জন্য
* আগুন লাঠি, সোনার মোহর ও কালো বেড়ালছানা
* হোইচির গল্প
* ভূতুড়ে বিজ্ঞাপন
* পাহাড়ী জোছন
* বিরামপুরের ওয়েটিং রুমে
* প্রাণদাতা
* কথা রেখেছিল যুধিষ্ঠির
* সিত্যিভূতের গল্প
* ছায়ায় মায়ায়
* ভূতের চর
* কালো কুকুর
* অসীম সব জানে
* প্রেতাত্মা
* গুপ্তবাড়ির গুপ্তরহস্য
* বন কলমীর বিলে
শেষ ফ্ল্যাপের কথা:
শুকতারা পত্রিকায় বছরে নিয়মিত দু’বার করা হয়। ভৌতিক সংখ্যা, এছাড়া শারদীয়া সংখ্যায় ভূতের গল্প তো কিছু থাকেই। কাজেই এই পত্রিকায় দীর্ঘ তেষট্টি বছর ধরে কত শত ভূতের গল্প প্রকাশিত হয়েছে সেটা তো সহজেই বোঝা যায়। লিখেছেন, বিচিত্র ধরনের সব ভূতেরা পত্রিকার পাতায় ভিড় জমিয়েছে। এই এত সব গল্পের মধ্যে থেকে মাত্র একশো একটি গল্প বেছে নেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। নামী লেখকদের গল্প বাছতে হবে, তারা অনেকেই এতদিনে বহু গল্প লিখেছেন-তার মধ্যে সেরা লেখাটি বেছে নিতে হবে; ততটা নামী না হলেও গায়ের লোম খাড়া করা কিছু গল্প যাঁরা লিখেছেন, তাদের গল্পও নিতে হবে; আর সবচেয়ে বড়ো কথা হল, একই রকম না হয়ে যায়, প্রত্যেকটা গল্প যেন আলাদা রকমের সেটাও দেখতে হবে। নইলে সে গল্প তোমাদের ভালো লাগবে কেন! পড়তে গেলে একঘেয়ে মনে হবে যে!
এই সব কথা মনে রেখে, অত্যন্ত খুঁটিয়ে বিচার করে এই বইয়ের প্রত্যেকটি গল্প নির্বাচন করা হয়েছে যাতে একটি গল্পও পড়ে মনে না হয় ঠিক জমল না। প্রত্যেকটি গল্পই রোমহর্ষক, উত্তেজনায় ঠাসা, শুরু করলে আর শেষ না করে ওঠা যায় না। কে কতটা সাহসী সে প্রমাণ যদি পেতে হয়, এক্ষুনি এই বই নিয়ে বসে পড়তে হবে।