ফ্ল্যাপে লিখা কথা ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মূলত দুটি প্রধান ধারা লক্ষ করা যায়। প্রথমত কংগ্রেস-মুসলিম লীগের (ব্রিটিশ আমল) ও আওয়ামী লীগের (পাকিস্তানি আমল) বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারা। দ্বিতীয়ত বামপন্থি মার্কসবাদী আন্দোলনের ধারা । তদানিন্তন অবস্থায় প্রধান বিরোধ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও পাক-উপনিবেশবাদ বনাম সমগ্র জাতির বিরোধ। এই প্রধান বিরোধ নিরসনের দুটি পথ খোলা ছিল। একটি সংস্কারবাদী পথ যেখানে শ্রেণিসংগ্রাম -পুঁজিবাদ-শোষণ বিরোধিতা পরিত্যাজ্য। যেখানে জাতীয় আন্দোলনের লক্ষ মূলত শুধু ভৌগলিক স্বাধীনতা অর্জন; অপরটি মার্কসীয় বিপ্লবাবাদী পথ। সাবালটার্ন স্কুলের মতে এসব জাতীয়বাদী আন্দোলনের নেতারা ছিলেন শোষক ও উৎপীড়ক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত । তাই এই আন্দোলনের সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে বিরোধের চেয়ে আত্নসমর্পণের পাল্লাই অধিকতর ভারি। বুর্জয়া জাতীয়তাবাদীদের এসব আপোষকামিতা সুবিধাবাদিতা এবং জনগনের সাথে প্রতারণার বিষয়গুলো বইয়ের বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে বুর্জোয়া জাতীয়বাদীরা কখনো সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা কখনো বিদেশি হটানোর নামে, কখনো ভারত বিরোধিতা , কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে একই পুঁজিবাদী সমাজকাঠামোকে বজায় রেখে ক্ষমতার পালাবদল ঘটিয়ে শোষণ নির্যাতনের মাধ্যমে ধনী-গরিবের বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়ে চলছে। আলোচনা করা হয়েছে ৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগের সময় অর্থ্যাৎ ক্ষমতা হস্তান্তরের এবং ৬৯’র গণঅভুত্থানের পরবর্তী অর্থ্যাৎ ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে সময় বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী মুলধারটি কেন নিয়ামক শক্তি হয়ে দাঁড়ায় আর বামপন্থি ধারাটির এই ঘটনার ওপর তেমন বিশেষ কোনো প্রভাবই রাখতে পারল না। ৪৭’র ভারতবর্ষ ভাগকে কেন্দ্র করে ১৯৪৬-১৯৫০ এর কালপর্বে উপমহাদেশব্যাপী বিশেষত বাংলা-বিহার ও বাঞ্জাবে হিন্দু-মুসলমান ও শিখদের মধ্যে যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা সংঘটিত হয় তার পটভূমি ও বিস্তার নিয়েও এই বইয়ে আলোচনা করা হয়। ৪৭’র ভারত ভাগের পর বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ৬৫ বছরের রাজনীতির ইতিহাস ডান (সুবিধাবাদী)বিচ্যুতি ও অতিবাম হঠকারিতার ইতিহাস। এ ডান (সুবিধাবাদী) বিচ্যুতি ও অতি বামহঠকারিতা কখন কীভাবে কোথায় কাজ করেছে এবং কেন বামপন্থিরা জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়াদের বিকল্প হয়ে উঠতে পারল না । এতদসম্পর্কে এই বইয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং আরো বিস্তারিত ধারনা নেওয়ার উদ্দেশ্যে এ বইয়ের পরিশিষ্টে এতদসংশ্লিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক দলিল ও প্রামাণ্য কাগজপত্র সংযুক্ত করা হয়েছে।
Title
উপমহাদেশের জাতীয়তাবাদী ও বামধারার রাজনীতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্ম। গ্রামের স্কুল ও কলেজ পার করে স্নাতক করেছেন ঢাকার শহীদ সোহওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে। সীমান্তবর্তী মানুষের বিচিত্র ও সংগ্রামের চিত্র দেখে প্রথম জীবন ও তার রূপ রসের ব্যাপারে ধারণা পেয়েছেন। গণমানুষের জগত ও অনুভূতির জগতে তারপর নিজের অজান্তেই অনুপ্রবেশ করেন। লেখক জীবন এখনো সংক্ষিপ্ত, তবু তিনটা পর্যায় চলে এসেছে এই অধায়ে। ফেসবুকে নিয়মিত গল্প লেখার পর ২০১৮ সালে লিখেন প্রথম উপন্যাস “শিকল”। পরের বছরে প্রকাশিত হয় তার লেখা ইতিহাস নির্ভর রাজনৈতিক উপন্যাস “বিভ্রম”। দুই উপন্যাসে গ্রহণযোগ্যতা পাবার পর “ত্রিকোণমিতা” উপন্যাস ও গল্পগ্রস্থ “বেঁচে থাকার গান” প্রকাশের পর নিয়েছেন পাঁচ বছরের নাতিদীর্ঘ বিরতি। সাময়িক বিরতি শেষে ২০২৫ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হবে তার দুটি উপন্যাস “বাড়ির নাম জল তরঙ্গ” এবং “লক্ষ্মণরেখা”। মূলধারায় লেখার পাশাপাশি জয়নাল আবেদীন টেলিভিশন চিত্রনাট্য, কন্টেন্ট ও কপি রাইটিং, অনুলিখন জাতীয় লেখালেখির বিভিন্ন মাধ্যমে যুক্ত আছেন। বাংলাদেশে শুধুমাত্র লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেয়া দুরূহ কাজ। জয়নাল আবেদীন আশা করেন, কোনো একদিন তিনি এই দুরূহ অসাধ্যটি সাধন করতে পারবেন।