একটি জাতি কতখানি সমৃদ্ধিশালী তার পরিচয় বহন করে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিক্ষায়। সাংস্কৃতিক রাজধানীখ্যাত জনপদ কুষ্টিয়ার সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা এই মাটিতে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য ক্ষণজন্মা মনীষী, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও শিল্পী। কুষ্টিয়ার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার টান থেকেই অজস্র লেখকের মসির ভাবাবেগ সাজিয়ে লেখকদ্বয় গ্রন্থে রূপ দিয়েছেন। কেউ কেউ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার সুখস্মৃতি সামনে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন, কেউ-বা ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে আপন ভুবন সাজিয়েছেন। তাঁদের ভাবনায় ভালোবাসার কুষ্টিয়াকে নিয়ে অনেকেই অনেক গ্রন্থ লিখেছেন, আজও লিখে চলেছেন।
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা (১৯০০-২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) যেসব লেখকের গ্রন্থ কুষ্টিয়াকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে, তাদের গ্রন্থসমূহ নিয়ে সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই গ্রন্থে লেখকবৃন্দের লেখা গ্রন্থ আলোকচিত্রের মতো সাজানো হয়েছে। এমনভাবে না সাজালে হয়তো নতুন প্রজন্ম জানতেই পারবে না যে, কুষ্টিয়া জেলাকে নিয়ে এতগুলো প্রকাশিত গ্রন্থ আছে আমাদের মাঝে। এই কাজটি না করে গেলে হয়তো নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের স্থায়ী সম্পদ পুরোনো গ্রন্থগুলো ধীরে ধীরে চলে যেত চোখের অন্তরালে। বহু লেখক পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, রেখে গেছেন তাঁদের স্মৃতিমাখা কুষ্টিয়া নিয়ে লেখা গ্রন্থ। এই গ্রন্থের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে আয়নার মতো পরিষ্কার হবে লেখকদের জীবন সম্পর্কে, অবদান সম্পর্কে, ত্যাগ ও তিতিক্ষার জানা-অজানা সব তথ্য। আর তাঁদের স্মৃতিকে ধারণ করতেই আমাদের এই ক্ষুদ্র আয়োজন।
‘কুষ্টিয়ার গ্রন্থকথা’ গ্রন্থটি অনেক তথ্যপূর্ণ। ইতিহাসের মতো পুরোনো গ্রন্থ যে ছাপার অক্ষরে গ্রন্থকথার মধ্যে সুখপাঠ্য হয়ে উঠবে, তা কখনো ভাবিনি। অনেক ভাঙা-গড়ার সঙ্গে ‘কুষ্টিয়ার গ্রন্থকথা’ পলিমাটির মতো জেগে উঠবে আলোকচিত্র রূপে তথ্যসংবলিত স্থায়ী সম্পদ হিসেবে।
১৯৭৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা অধ্যক্ষ মুহম্মদ আমজাদ হোসেন, সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। মাতা মিসেস আম্বিয়া হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষিকা, কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। ড. হাসনায়েন বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, লালন একাডেমি, বন্ধু সংগঠন ব্যাচ ’৮৮ কুষ্টিয়ার জীবনসদস্য ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। প্রকাশনা সংস্থা কণ্ঠধ্বনি-র স্বত্বাধিকার। কবে কখন কোনো জিনিসের আরম্ভ কী করে হয়- তা বলা কঠিন। সেই আরম্ভকালটি রহস্যে আবৃত থাকে। কিন্তু মন হঠাৎ কেন বিদ্রোহী হয়ে কর্মজগত থেকে ভাবজগতে প্রবেশ করেছে, আজ আর তা সঠিক বলতে পারবো না। শুধু অস্পষ্ট মনে পড়ে, ছন্দ মেলাবার আনন্দ-প্রয়াসে লিপ্ত আমাদের শৈশবের দিনলিপি। ভবিষ্যতে লেখালেখি হবে আমাদের জীবনের প্রধান আরাধ্য, তা আগে কখনো বুঝতে পারিনি। ইতিহাস-ঐতিহ্যের শেকড় খুঁড়তে গিয়ে আমার একান্ত ইচ্ছা জেগেছে, আমার শেষ জীবন কাটুক কুষ্টিয়া জেলার নিভৃত পল্লীতে; যেখানে মানবতা, মানবপ্রেম, শ্রদ্ধা, কোমল হদয়ের ভালোবাসা, মাটির গন্ধ আমাকে মুগ্ধ করে যাবে অবিরাম।...