ছোটগল্পকে একেকজন একেকভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। একটি জনপ্রিয় সংজ্ঞা হচ্ছে, এর মধ্যে 'শেষ হইয়াও হইল না শেষ' এমন একটি আবেদন থাকতে হবে। কিন্তু এটি ছোটগল্পের শেষ কথা নয়। সময়ের সাথে ছোটগল্পও নতুনতর রূপ নিচ্ছে, বিকশিত হচ্ছে। উপন্যাস ও ছোটগল্পের বর্ণনাভঙ্গির তীব্রতা বা পরিণতির মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। একেক ছোটগল্পের আবেদন একেক জায়গায় থাকতে পারে। আবার ছোটগল্প গদ্যময় না হয়ে পদ্যধর্মীও হতে পারে। উপন্যাসেও এমনটি দেখা যায়।
ছোটগল্পের দৈর্ঘ্য বা আকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। আগে অনেকে উপন্যাসের সাথে ছোটগল্পের পার্থক্য তুলে ধরতে এই বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এডগার এলেন পো বলেছেন, একটি ছোটগল্পের দৈর্ঘ্য এমন হওয়া উচিত যাতে এটি এক বসাতেই এবং আধা থেকে দু ঘন্টার মধ্যে শেষ করা যায়। কেউ কেউ এর আকার দু হাজার থেকে ২০ হাজার শব্দের মধ্যে হওয়া উচিত বলে মনে করেন। কিন্তু আমরা এক হাজার শব্দের নিচেও চমৎকার ছোটগল্পের দেখা পাই। এই সংকলনেও তার প্রমাণ রয়েছে। রয়েছে ২০ হাজার শব্দের চেয়েও বড় আকারের ছোটগল্প।
অপর দিকে কোন লেখক বিশেষ সমাজ বা বিশেষ কালে বাস করলেও তার লেখা হয়ে উঠতে পারে সার্বজনীন ও সর্বকালীন। এই সংকলনেও তার প্রমাণ রয়েছে। সংকলনটিতে স্বাভাবিকভাবেই সাধারন মানবিক প্রেমের গল্প স্থান পেয়েছে যা ছোটগল্পের একটি প্রধান ধারা। আবার এই সংকলনে এমন গল্প রয়েছে, যেগুলোতে যুক্তির সাথে অতি প্রাকৃতকথাকে, ভালবাসার সাথে কখনো কখনো মানবিক বৈকল্য এবং মোহচ্ছন্নতাকে নিপুণ দক্ষতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে। আনিসুর রহমান (জন্ম ১৯৪৭ সালে দেরকোণায়)
ব্যঙ্গধর্মী ছোটগল্পে সমাজে থাকা অবিচার, ভন্ডামি, দ্বিমখী আচরণ ইত্যাদিকে তীব্রভাবে কষাঘাত করা যায়। এজন্য এ ধরণের গল্পের জনপ্রিয়তা লক্ষণীয়।
সংকলনটিতে স্থান পাওয়া ছোটগল্পে এইসব কপটতার কিছু উন্মোচন রয়েছে। উপন্যাসের মত ব্যাপ্তি না থাকলেও ছোটগল্পের সীমিত পরিসরেও জীবনের ব্যাপক ক্যানভাসকে তুলে আনা যায়। পাঠক এই সংকলনে তার উদাহরণ পাবেন।
প্রতীকী লেখা খুব কঠিন, কিন্তু একইসঙ্গে খুবই কার্যক যা সংকলনটির পাঠকেরা অনুধাবন করতে পারবেন বলে আশা করি।
আনিসুর রহমান-এর জন্ম ১৯৪৭ সালে নেত্রকোনায়। তিনি লেখালেখি এবং সাংবাদিকতা করছেন প্রায় পাঁচ দশক ধরে। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন জনপ্রিয় দৈনিক পূর্বদেশ-এ সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লিখে চলেছেন। তার প্রিয় বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি। ১৯৭৫ সালে পূর্বদেশ বন্ধ করে দেয়া হলে তাকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে সরকারিভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু লেখালেখি এবং সাংবাদিকতার আকর্ষণে তিনি স্বেচ্ছায় ঐ পদ ছেড়ে দিয়ে ১৯৮৪ সালে দৈনিক সংবাদের সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি সংবাদের সহকারি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। '৮৯-এর অক্টোবর থেকে তিনি সুইডেনের ষ্টকহোলমে বসবাস করছেন। তিনি স্টকহোম থেকে প্রকাশিত বাংলা সাময়িকী দেশ-বিদেশ-এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে দুই দশক কাজ করেছেন। ইতোমধ্যে রাজনীতি ও সাহিত্য বিষয়ক তাঁর বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আনিসুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।