কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন— ‘আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইল না কেহ’। সেটাই বাস্তবতা। প্রতিটি ব্যক্তিহৃদয়েই কিছু কথা থাকে; তা বলার জন্য মন আকুলি বিকুলি করে। কবি মীর রুহুল মবিন এর তেমনি একান্ত হৃদয়কথন— ‘উদ্বেলিত হৃদয়’। এটি তার প্রথম কাব্য; আমি বলতে চাই— আদর্শ কবিতাচয়নী। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন শিক্ষার্থীপ্রিয় অনন্য আদর্শ শিক্ষক। কাব্যটির ‘আমি এবং’ শীর্ষক কবিতায় তার অর্থাৎ কবিজীবনের ছায়াপাত ঘটেছে। ইংরেজি ভাষায় রচিত তিনটি কবিতা বইটিতে সূচিভুক্ত হয়েছে।
রূহুল মবিন স্যার বাণিজ্য বিষয়ের পাশাপাশি ইংরেজি পড়াতেন। একজন দক্ষ ইংলিশ টিচার হিসেবে তিনি খ্যাতিমান এবং শেক্ষাবোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত। পাঠকের মনে হবে ইংরেজি ভাষায় কাব্যচর্চা করলেও তিনি সাফল্য পেতেন।
সত্য সুন্দর ন্যায় আদর্শ বাণীরূপ পেয়েছে ‘উদ্বেলিত হৃদয়’-এর শ্লোকে শ্লোকে। রাজনীতি অর্থনীতি এমন কি পররাষ্ট্রনীতি পর্যন্ত রূহুল মবিনের কবিতায় বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে। পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন— কবি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থেকে কোনো অবস্থান নেননি। যা বলেছেন দেশকাল সমাজের অকাম্য অবাঞ্ছিত ও অনৈতিক বিশৃঙ্খলাজাত মনোকষ্ট থেকে। যা তার দেশপ্রেমের পরিচয়। মানবিক প্রেমেরও নিপুণ রূপকার কবি মীর রুহুল মবিন। তার ভালোবাসার চরণগুচ্ছ সংবেদনশীল। প্রেম যত রূপে— কবিতায় তিনি বলেছেন ‘যে যেমন বস্তু চায়/ সে তেমন বস্তু পায়/রুমি পেয়েছেন মহান স্রষ্টায়/কেউ চায় প্রেমী কেষ্ট/শুদ্ধ প্রেমে হলে নিষ্ঠ/তাও সে পায় সহি চেষ্টায়।’ আহা, কী কথা!
কবি ত্রিপদী ঢংয়েই বেশির ভাগ কবিতা রচনা করেছেন। মিল বা মাত্রাক্ষরের প্রতি কবির বিশেষ প্রবণতা রয়েছে। তবে তার বক্তব্য ঋজু। ছন্দ মাত্রার হিসেব নিকেশে ত্রুটি আছে কিন্তু শিক্ষকসুলভ আদর্শিক বক্তব্য ও সরল ভাষার সমন্বয়ে তার অধিকাংশ কবিতাই পাঠকের ভালো লেগে থাকবে।