গল্প হলো তাই যা আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার মধ্যকার ঘটনা। যা থাকে না বলা কথায়, না বোঝার দোলাচলে দোদুল্যমান এক প্রজাপতির মতো, তিরতির করে পাখা মেলে উড়ে উড়ে বেড়ায় ঘটনার অন্তরালে। যা কেবল মানুষের জীবনের নয়, গহিনের কথা বলে।
যে কারণে গল্পের ভিতরের চরিত্রগুলো ক্ষণে ক্ষণে খোলস বদলায়, কখনও পাখির মতো ডানা মেলে ওড়ে, কখনও রাগে, ক্ষোভে রক্তরঙ ধারণ করে। তারা স্থান, কাল, সময় পরিবর্তন করে শেখায় বেঁচে থাকার পুরো কৌশল। কখনও চরিত্রের স্থবিরতায় মনুষ্য জীবনের স্থিরচিত্র ফুটে ওঠে।
যেভাবে বাকপটু সুলতাও একসময় স্থবির হয়ে যায়! অনেক কাঁদতে ইচ্ছে করলেও কাঁদতে পারে না আনছার আলী মৃধা। কিংবা ভাষা হারিয়ে ফেলে যৌবনবতী বিধবা জুলেখাবিবি কিংবা যৌনকর্মী সোনালি। কখনও রক্তমাখা শরীর নিয়ে অনুভব করে এক অনিশ্চিত পৃথিবীতে তার মাকে একা রেখে চিরতরে চলে যাওয়া। কিংবা ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া শোভা, যার মুখ পুরো-পৃথিবী চেপে ধরে ঘুরছে! আসছে ফাল্গুনে কেউ অপেক্ষা করেÑ বাবুই ফিরে আসবে, কিংবা পানির গøাস হাতে চিরদিন দাঁড়িয়ে থাকে কোনো মা। কেউ কেউ মাকেও ভাগাভাগি করতে দ্বিধা করে না, হাসপাতালে অসংখ্য লাশ আর মৃত্যু দেখে সাহসী হয়ে ওঠে কোনো নারী। এই নারীই কখনো প্রেমহীন ময়না, অনামিকা, মমতার মতো নিশ্চুপ! নাবিলার মতো কেউ জন্মদিনে অপেক্ষা করে তার বাবা একটি হাতঘড়ি নিয়ে ঘরে ফিরবে, কিন্তু কবি বা লেখক জীবন বড় অভিশপ্ত, যার হাতঘড়ি কেনার মতো সামর্থ্য থাকে না! অতএব, মানুষ যেমন যুদ্ধপ্রিয় তেমন মুক্তিপ্রিয় একথা বুঝে যায় নজরুল, তাই সে জীবনকে ধুলোর মতো উড়িয়ে ফিরে যায় অনন্ত-গ্রহে!
এভাবেই সকল স্থবিরতা ঠেলে জীবনের কাঁধে ভর করে জেগে ওঠে নানারকম গল্পের ছায়া, যে ছায়া জীবনের অনুলিপি হয়ে ধরা দেয়, যে গল্পগুলো লেখা থাকেÑ সীসার পালকে!
মাহফুজা অনন্যা: ছােটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন সত্যিকারের মানুষ হওয়া। আর মানুষ হওয়ার পথের অন্তরায়গুলােকে পুঁজি করে নিভৃতে লিখে চলেন কবিতা। তার কবিতায় ন্যাকামাে নেই আছে বাস্তবতার ছোঁয়া। এছাড়াও প্রকৃতি, প্রেম, বিরহ, দেশ, কাল, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তিনি কবিতা লিখেন। সমসাময়িক বিষয়গুলাে নিয়ে তিনি ভাবতে বেশি পছন্দ করেন, তার কবিতা পড়লে তা স্পষ্ট বােঝা যায়। যখন অন্যান্য খ্যাতিমান কবিরা দেশের সংকটে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান কিংবা পদকের লােভে ঘুমের ভাণ ধরে গরম কাথার নিচে ছন্দময় গতিতে পা দোলান তখন তরুণ কবি মাহফুজা অনন্যা নানারকম অসংগতিকে তুলে ধরছেন তার কবিতায়। কবিতা লেখার পাশাপাশি দেশে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় কলম চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তার কবিতা ও কলাম প্রকাশিত হয়। ব্যক্তিগত সুখ, স্বাচ্ছন্দ্যর চেয়ে সমাজ, দেশ, দেশের মানুষকে নিয়ে বেশি ভাবেন তিনি। একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে মানবতার এ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৮২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কবি মাহফুজা অনন্যার জন্ম। সময়ের সাহসী কবি কুষ্টিয়া জেলার মধুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মােঃ সাদ আহমেদ বিশিষ্ট কাঠ ব্যবসায়ী। মা তাহমিনা আহমেদ, কবিতাপ্রেমী এবং সুগৃহিণী। তিন ভাইবােনের মধ্যে তিনিই বড়। বােন লাভসিতুল লাকি ও ভাই মেহফুজ আনানের অনুপ্রেরণায় লেখালেখি করেন। পেশা শিক্ষকতা (ম্যাথ ইনস্ট্রাক্টর), ঢাকায় বসবাস। বাংলাদেশ ব্যাংক হাইস্কুলের সিনিয়র শিক্ষক। (গণিত) মােঃ ফারুক হােসেন তার জীবনসঙ্গী। বড় ছেলে মাধুর্য (১২) ও ছােট ছেলে সৌরাজ্য (৩)।। তার প্রকাশিত আরও দুটি কাব্য- ‘সােনালি অসুখ। এবং কামার্ত নগরের কামিজ।