সত্যজিৎ রায় এক বাঙালি কিংবদন্তী, যিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বিশ্বদরবারে। কর্মজীবনে একইসাথে চিত্রনাট্য রচনা, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, সম্পাদনা, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ, লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন অসম্ভব গুণী এই মানুষটি। ১৯২১ সালে কলকাতার শিল্প-সাহিত্যচর্চায় খ্যাতনামা এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে রয়েছে তাঁর পৈত্রিক ভিটা। ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি ‘লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে’ বা ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’ তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিলো যে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’র জন্যই পেয়েছিলেন ১১টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যার মধ্যে অন্যতম হলো কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব দলিল’ পুরস্কার। তবে তাঁর কাজের সমালোচকও কম ছিলো না। এসব সমালোচনার উত্তরে লেখা দুটি প্রবন্ধ পাওয়া যায় সত্যজিৎ রায় এর বই ‘বিষয় চলচ্চিত্র’-তে। কল্পকাহিনী ধারায় সত্যিজিৎ রায় এর বই সমূহ জয় করেছিলো সব বয়সী পাঠকের মন। তাঁর সৃষ্ট তুখোড় চরিত্র ‘ফেলুদা’, ‘ প্রফেসর শঙ্কু’ এবং ‘তাড়িনী খুড়ো’ যেন আজও জীবন্ত। একের পিঠে দুই, আরো বাড়ো এমন মজার সব শিরোনামে বারোটির সংকলনে লিখেছেন অসংখ্য ছোটগল্প। এছাড়াও সত্যজিৎ রায় এর বই সমগ্র’র মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চলচ্চিত্র বিষয়ক ‘একেই বলে শ্যুটিং’, আত্মজীবনীমূলক ‘যখন ছোট ছিলাম’ এবং ছড়ার বই ‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগেই তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘একাডেমি সম্মানসূচক পুরষ্কার' (অস্কার) প্রাপ্তি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।
এভাবেই প্রতি রোববারে, শহিদ মিনারের ধারে এক ফালি ঘাসের উপর, চকরা বকরা আসনে বসে সাতবার বাঁশি বাজায় আর হাঁক দেয় হারুনদা। হারুনদা মানে হারুন অর রশিদ, 'বাগদাদের খলিফা - জাগলিং এর বাদশা!' পিতলের বল, লাট্টু-লেত্তি, রঙ্গিন পালক লাগানো বাঁশের কঞ্চি দিয়ে চোখ ধাঁধানো ভোজবাজির খেলা দেখায়।
হারুনদার সাথে তার চেনা ট্রেনে। যখন চোখ খুলেছিল, জানতো না সে কে? শুধু মাথার নিচে ছিল ঘাস, ঠান্ডা পাথর, উপরে কালো আকাশে জ্বলজ্বলে তারা আর মাথায় অনেক ব্যাথা। বনের ধারে জোনাকি আর তোবড়ানো একটা গাড়িতে দুটো মানুষ মরে পড়ে আছে।
এক বাঙালি ভদ্রলোক তাকে খুঁজে পেলেন। নাম ঠিকানা বলতে পারে না দেখে, তাকে নিতে চেয়েছিলেন পুলিশের কাছে। তাই সে পালালো। ভোঁ বাজিয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ছাড়ছিলো যে গাড়িটা, দৌড়ে উঠে পড়লো তাতে। পা ফসকায়নি, দুটো হাত টেনে তুললো তাকে কামরায়। হারুনদার হাত। বারবার সবাইকে 'নাম জানি না' বলতে ভালো লাগছিলো না, তাই এবার দোকানের বোর্ডে দেখা নামটা বলে দিল নিজের করে 'ফটিকচাঁদ'।
হারুনদা তাকে কিছু মনে করার জন্য চাপ দেয়নি। বলেছে এমনিতেই মনে পড়বে। উপেনবাবুর চায়ের দোকানে কাজ জুটিয়ে দিয়েছে, যদিও পোশাক আর চুলের ছাঁট পরীক্ষা করে বলেছে 'তুমি সাহেববাড়ির ছেলে!' দুটো কাঠের বলও দিয়েছে, রাতে খেল প্র্যাকটিস করে ফটিক।
কিন্তু চায়ের দোকানে মামলেট আর চা খেতে আসা ষন্ডা লোকটা ফটিককে এতো প্রশ্ন করলো কেন? বে-পাড়ার পা বাঁকানো শ্যামলাল ফটিকের পিছু নিয়েছে কেন? হারুনদা কি পারবে ফটিককে শ্যামলালের হাত থেকে বাঁচাতে? ফটিকের আসল পরিচয় কি?
#মন্তব্যঃ ছোটবেলায় কতরকম অলীক ইচ্ছে থাকে আমাদের, বাড়ি থেকে পালাবো, বাস ড্রাইভার হবো! জঙ্গলে যদি ডাকাত দলের সাথে ভীড়ে যাই? বা চায়ের দোকানের বয় হয়ে কাটিয়ে দিলে কেমন লাগবে?
এক বালক তেমনি ঘটনাচক্রে হারিয়ে গিয়েছে বাড়ি থেকে। মাথায় আঘাত পেয়ে নিজের অতীত ভুলে গেছে সে, জানে না কি তার পরিচয়। শুধু বলের খেলা দেখানো প্রিয় হারুনদা, উনুনের ধোঁয়ায় মোড়ানো বস্তিতে হারুনদার আজব ঘরটা, উপেনদার চায়ের দোকানের হরেকরকম খদ্দের আর শহিদ মিনারে বাঁশি বাজিয়ে খেলা দেখানোই তার কাছে বর্তমান। সেই জীবনে বাড়তি উত্তেজনা নিয়ে আসে ধাওয়া করা গুন্ডার দল। যে উত্তেজনার স্বাদ আমরা পাওয়ার আশা করেছি শিশুবয়সে - তাকেই ফটিকের জীবনের পাতায় নিয়ে এসেছেন সত্যজিৎ রায়।
Read More
Was this review helpful to you?
By Abdullah-Al-Wasib,
08 Apr 2021
Verified Purchase
ফটিকচাঁদ সত্যজিৎ রায়
সত্যজিৎ রায়ের সুন্দর একটা বই ′ফটিকচাঁদ′। বইটির নাম গল্পের মূলচরিত্র থেকেই এসেছে। গল্পের শুরু জঙ্গলের কাছে খোলা মাঠে, ফটিক একটা পাথরের উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। যখন তার জ্ঞান ফিরলো তার কিছুই মনে নেই, এমনি তার নামও! চারদিকে ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝতে পারলো আকাশ ভরা তারা, একটু দূরে জোনাকির আলো এবং একটা গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে দেখলো গাড়ির ভেতর দুইজন আছে, তাও মৃত। তারপর তাকে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল, ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে দিল কিন্তু যখন শুনছে তাকে পুলিশে দেওয়া হবে তখন থেকে সে ভয় পেয়েছে৷ তাই ফটিক সেই জায়গা থেকে পালায় গেছে৷ উঠে পড়ে ট্রেনে, সেইখানে দেখা হয় হারুনদার সাথে। তিনি সার্কাসের মতো খেলা দেখান, তিনি ভালো মানুষ। ফটিকের সাথে কথা বলে সব কিছু শোনার পর ফটিককে সাথে নিয়ে যান এবং একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। এরপর ঘটে যায় অনেক ঘটনা!
ফটিকের স্মৃতি ফিরে এসেছিল? সে কি পেরেছিল তার ঠিকানা বলতে? তাহলে বইটি পড়ুন উত্তর পেয়ে যাবেন!
আমরা ছোট বেলায় কত কি হতে ভাবতাম! বাসা থেকে পালিয়ে যাবো। পাইলট, ড্রাইভার, খেলোয়ার, বাবুর্চি হবো আরো কত কি! কিন্তু ঘটনাক্রমে এক বালক স্মৃতি শক্তি হারিয়ে বাড়ির বাইরে থাকে আর কাজ করে চায়ের দোকনে।
কি সব কল্পনা, কত ভাবনা তারই এক অংশ ফটিকের জীবনের পাতায় লিখছেন সত্যজিৎ রায়। তার লেখার মাধ্যমে শিশুবয়সের অপূর্ণ কল্পনা একটু হলেও পূর্ণতা পেয়েছে।
Read More
Was this review helpful to you?
By Jobayet Hasan,
23 Oct 2019
Verified Purchase
সত্যজিৎ রায়ের দারুণ একটি বই "ফটিকচাঁদ"। ফটিকচাঁদ নামটি মূলত দেওয়া হয়েছে গল্পের মূল চরিত্রের নামে (যদিও সেটা তার আসল নাম নয়)। কাহিনীর শুরুটা হয় জঙ্গলের ধারে একটা খোলা মাঠে। ফটিকচাঁদ সেখানে ঘাসের উপর অজ্ঞান হয়েছিল। যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে তার নিজের নামটাও মনে করতে পারছিল না। শুধু মাথার পেছনে ঠান্ডা পাথরের পরশ পায় উপরে তাকিয়ে দেখে তারা ভরা রাতের আকাশ, গাছের উপর জোনাকির আলো আর রাস্তার পাশে একটি গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে রয়েছে। গাড়িতে ছিল দুটো লোকের মৃতদেহ। এরপর তাকে একজন বাঙালি খুঁজে পায়। লোকটি যখন দেখতে পেল যে ছেলেটার মেমরি লস হয়েছে তখন সে তাকে পুলিশকে দিয়ে দিতে চাইল যেন তারা তার পরিচয় খুঁজে বের করতে পারে। কিন্তু ছেলেটার এই ব্যাপারটা পছন্দ হল না। তাই সে পালাল আর ট্রেনে দেখা হল গল্পের আরেক মজার চরিত্র হারুনদার সাথে। হারুনদা তার নাম জিজ্ঞেস করলে সে একটা ডাক্তারের সাইনবোর্ড দেখে সেটা তার নাম বলে চালিয়ে দেয়। নামটি ছিল "ফটিকচাঁদ"। সে জানতে পারে হারুনদা জাগলিং করে আর নানা রকম খেলা দেখিয়ে রোজগার করে। হারুনদা তাকে একটা চায়ের দোকানে চাকরি পাইয়ে দেয়। এরপর ঘটতে থাকে নানা মজার ঘটনা। আর হ্যাঁ, 'ফটিকচন্দ্র' কি তার স্মৃতি ফিরে পাবে? জানতে হলে পড়ুন সত্যজিৎ রায়ের কিশোর ক্লাসিক "ফটিকচাঁদ"।