তাঁর কবিতা বোধ বুদ্ধি ও উপলব্ধির, তবে আবেগেও উপেক্ষিত নয় এখানে। কখনও স্বগিতোক্তির মত তাঁর উচ্চারণ নির্জ বনভূমিতে নিঃসঙ্গ ঝর্ণাধারার ধ্বনি হয়ে বেজে ওঠে পাঠকের মনে। আবার সংঘাত-বিক্ষুব্ধ দ্বন্দ্ব মুখর বর্তমান থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না কবি, সময় ও সমাজের দায় মেনে নিয়ে হয়ে ওঠেন সমসাময়িক।
রুচি ও মননঋদ্ধ প্রাবন্ধিক এবং তীব্র তীক্ষ্ণ যুক্তিতর্ক সঞ্চারী কলাম লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিতি আবুল মোমেনের। কিন্তু কবিতার তিনি যেন অন্য একজন। তাঁর কণ্ঠ নিচু, কাব্যভাষা গাঢ়, গভীর ও সংবেদনশীল। ‘কাগজের কুশীলক’ কবির পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ।
নারীর প্রতি সবিস্ময় অনুরাগ, দেশ ও মানুষের জন্য ভালোবাসা, গৌরবের অতীত ও ঐতিহ্য, ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা বা উদ্বেগ-সবকিছুই আবুল মোমেনের কবিতার বিষয় । তাঁর শব্দ লক্ষ্যভেদী। অলংকারের বাহুল্য নেই, তবে ছন্দ ও ছন্দোহীনতায় , মিল ও অমিলে, উপমা-চিত্রকল্পের নিপুণ নির্মাণে তাঁর কবিতা রূপ ও রহস্যময়, সতেজ ও সপ্রাণ।
জন্ম চট্টগ্রামে, ১৯৪৮ সনের ১৮ ডিসেম্বর। সাহিত্যের পরিবেশে বড় হয়েছেন। স্কুল ও কলেজ জীবন চট্টগ্রামে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব ঢাকায়। কবিতা, প্রবন্ধ এবং কলাম লিখছেন নিয়মিত। এছাড়া তিনি কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষা নিয়ে। এ সূত্রে শিশুশিক্ষা নিয়েও প্রচুর লিখেছেন, এবং এখনও লিখছেন।। অনেকেরই জানা নেই ১৯৭৫ থেকে তিনি ও শীলা মমামেনের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে শিশু প্রতিষ্ঠান ফুলকি। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ত্রিশের অধিক। তবে কবিতা তিনি কখনাে ছাড়েন নি। কবি শামসুর রাহমানের আশংকাকে আশীর্বাদে পরিণত করে আবুল মােমেনের কবিতাচর্চা এগিয়ে চলেছে। এটি আবুল মােমেনের সপ্তম কাব্যগ্রন্থ। শিশু কিশােরদের জন্যে লেখা ইতিহাস বই বাংলা ও বাঙালির কথার জন্যে পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার। আর ২০১৬ সনে প্রবন্ধের জন্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।।