প্রকাশক হওয়ার মজা আর বিপত্তিটা বোধহয় একই। না চাইলেও প্রতিটি বইতে কিছু না কিছু ছাপ থেকেই যায়। আবার চাইলেও কোনো বইকে একান্তই নিজের বলে দাবি করা যায় না। প্রিন্টার্স লাইন ছাড়া অন্য কোথাও নিজের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া আদতে বইয়ের গুণগত ও গঠনগত সৌন্দর্যের বরখেলাপ করা হয়।
তবে এমন অকৃত্রিম অনুরোধ আগে খুব একটা পাইনি যে লেখক নিজেই বলছেন, “ভাই আমি কোন প্রতিথযশা কাউকে দিয়ে ভূমিকা লেখাতে চাই না। আপনি নিজে গল্পগুলো পড়েছেন। আমি চাই আপনি আমার বইতে কিছু লিখবেন”। লেখক কামরুল হাসান রাহাত ভাই পেশায় একজন দন্ত বিশেষজ্ঞ। সোজা কথা ডেন্টিস্ট। লেখকের এই পেশাদার পরিচয় শুনে আমাকে কয়েকজন বললেন, ভাই বইটা প্রকাশ করেন। বলা তো যায় না কখন আবার দাঁত তুলতে যেতে হয়। পরিচিত কেউ থাকলে ভালো হয়। যা দিনকাল যা পড়েছে!!!
তাঁদের কথায় বাস্তব মূল্য যথেষ্ট সেটা না বুঝার মতো গবেট মনে হয় আমি নই। তবে প্রকাশক হিসেবে আমার বই প্রকাশের কারণ আসলে এটা নয়। আশা করি আমার সারল্য পাঠক স্রেফ রসের উপকরণ হিসেবেই নিবেন। যাই হোক। আমি মনোযোগ দিয়ে বইয়ের গল্পগুলো পড়েছি। প্রথমে প্রকাশক হিসেবে বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে। এর পরে একবার স্রেফ পাঠক হিসেবে। শেষবার এডিটিং এর টেবিলে বসে।
পাঠক হিসেবে আমি মোটেই সিরিয়াস কিসিমের নই। বিশ্বসাহিত্য তো দূর কি বাত, বাংলাদেশের মূল ধারার সাহিত্য, সাহিত্য আড্ডা, এবং তত্ত্বকথার জগতে আমি নেহায়েত অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া এক ছোকরা যে শেষ পর্যন্ত নিজের ভালোলাগা, মন্দলাগার বাইরে যেতে পারেনি। আমার এই ফিচার মাথায় রেখেই আমি বলছি, এই গল্পগুলো যদি খুব নামী কারও কলম বা কিবোর্ড থেকে নেমে আসতো, এবং জাতি হিসেবে আমরা যদি পড়ুয়া হতাম এই সম্ভাবনা একেবারে অমূলক নয় যে এই বই নিয়েও কোনো সাহিত্য সমালোচক জাদু বাস্তবতা বা ম্যাজিক রিয়েলিজম ধরনের কঠিন কঠিন শব্দে একে পরিচয় করিয়ে দিতেন। পাঠক হিসেবে আমার মতো আমজনতা যেহেতু উপভোগ করেছে, আপনি আমজনতা হলে আপনিও উপভোগ করবেন গল্পগুলো এই কথাটা সাহস নিয়ে বলতে পারি।
কামরুল হাসান রাহাতের জন্ম ২৭শে জানুয়ারি, কুমিল্লায়। পড়াশোনা কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজ এবং ঢাকা ডেন্টাল কলেজে। পেশাগত জীবনে তিনি ডেন্টাল সার্জন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘ওরাল অ্যান্ড মেক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি’ বিভাগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্সে অধ্যয়নরত। ব্যক্তিগত জীবনে নিজেকে ‘রোদেলার বাবা’ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বই পড়া, সিনেমা দেখা ও ফটোগ্রাফি তার পছন্দের কাজ। জংবাহাদুর তার প্রকাশিত দ্বিতীয় বই। প্রকাশিত প্রথম বই দ্বিতীয় মস্তক (গল্পগ্রন্থ)।