উপন্যাসের ফ্ল্যাপের লেখা: এক জীবনে কেউ পাশে থাকবে, কেউ থাকবে না! কেউ হয়তো অতলস্পর্শ ভালোবাসবে, কেউ করবে ভালোবাসার নিখুঁত অভিনয়! মনের কথাগুলো বলার মতো একটা মানুষ এক জীবনে মিলবে কী মিলবে না সেটাও অনিশ্চিত ! আবার কেউ কেউ হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া মানুষটির স্মৃতিটুকু বছরের পর বছর ধরে জীবনের শেষ দিনটা অবধি বুকের ভেতর আগলে রাখে কতো না যতনে! মানুষের জীবনটা এমন কেন! জীবনে কেন এত দুঃখ! এত দহন! আসলে পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষই যেন খুব একা!... অনেক দিন পর মা-বাবার মায়াভরা ছবিটার দিকে চেয়ে থেকে চোখের পানি আটকে রাখতে পারলেন না! কতগুলো বছর হয়ে গেল মা-বাবা দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছেন! তবু যেন মনে হয়- এইতো সেদিন গ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার সময় মা জননী গায়ে হাতটা বুলোতে বুলোতে আয়াতুল কুরসি পড়তেছিলেন! জোবায়ের মোহাম্মদ ভেজা চোখে বিড়বিড় করছেন, রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।... নীরার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে মিলন আজহার বলল, কর্পোরেট জগতে সুন্দরী স্মার্ট নারীদের বড় চাহিদা। আই থিংক, আপনার মতো আবেদনময়ী নারীকে বিছানায় পাওয়ার জন্য কত পুরুষ পাঁচ লাখ দিতেও প্রস্তুত! সেটা বুঝতে নিশ্চয় আপনার কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়! ডোন্ট মাইন্ড! সব কথা খারাপ ভাবে নিলে কিন্তু চলবে না। অবশ্য প্রথম প্রথম এই জাতীয় কথায় মন্দ লাগাটাই স্বাভাবিক। মিলন আজহারের কথায় নীরার মাথায় রক্ত উঠে যায়। নীরার ভেতরে ঝড়, ভূমিকম্প, বজ্রপাত। নীরা দাঁতে দাঁত চেপে রাগ দমিয়ে মিলন আজহারের দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে বলল, আপনি আমাকে কী ভাবছেন! এমন অসভ্যর মতো কথা বলছেন কেন? অ্যাম আই আ কলগার্ল? আমি বেশ্যা!... ভূমিকায় লেখা: দুঃসহ প্রতিকূল পরিবেশেও হয়তো বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছেটুকু রাখতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারে মন্দ সময় মেনে নিয়েও কেউ না কেউ স্বপ্ন জয়ে সামনে এগিয়ে যায়। অত্যাধুনিক এই সমাজে নিত্য ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো প্রভাব ফেলছে কারো না কারো জীবনে। এই উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র নীরা। বাবার মৃত্যুর পর সংসার চালানোর দায়ভার আসে যার উপর। ভালোবেসে একজনকে কাছে পেতে চেয়েছিল সে। নিয়তি সেটা হতে দেয় নি। নীরার প্রেমে ডুবেছিল মিলন আজহার। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কু-মতলবে সুযোগ সন্ধানী হয়ে উঠে এই প্রেমিক পুরুষটি। অর্থের বিনিময়ে দেহ ভোগ করতে চেয়েছিল প্রেমিকার মন না পেয়ে। তবে নীরা নষ্টা হতে চায় নি। প্রেমিক পুরুষদের প্রতি তার ধারণা বদলায়। শহর-গ্রামে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় একটা আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে যেন! অপরাজনৈতিক সংস্কৃতির তৎপরতায় অকালে নিভে যায় কারো কারো জীবনপ্রদীপ। স্বার্থের পিছু ছুটতে গিয়ে বদলে যাচ্ছে প্রেমিক হৃদয়টিও। সময়ের ব্যবধানে যে যার মতো করে সাজিয়ে নেয় জীবন। চারপাশে থাকা মানুষজনের আচরণ আর অশুভ ঘটনাগুলো নীরাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। ছোট বোনটির কাছ থেকেও তাকে জীবন বাস্তবতার শিক্ষা পেতে হয়! কেউই তো থেমে থাকছে না। প্রত্যেকের ভিতরে বাইরে পরিবর্তন ঘটছে অবিরত। নীরা ফেলা আসা দিনগুলোতে ডুবে থাকছে নাতো! কোনো মানুষ যদি দূরে চলে যায় একদিন সে হয়তো ফিরবে। কিন্তু যে মানুষটির তাজা প্রাণ কোনো নরপশু কেড়ে নেয় সে কী আদৌ ফিরবে! তবু কাকে ভেবে তার প্রতিটি নিশ্বাস দীর্ঘশ্বাস হয়ে যায়! রাতবিরাতে স্মৃতি রোমন্থনে অবিরত দগ্ধ হচ্ছে নীরা অদ্ভুত এক নৈঃশব্দ্যের শব্দময়তায়! যৌবনমুখর জীবনে নীরা কী কারো নিষ্ফল প্রতীক্ষায় থাকবে! উপন্যাসের পাঠক সেটা ভেবে নিবেন। 'দুই জীবনের দহন' উপন্যাসে যে বিষয়টি তুলে ধরতে চেয়েছি বা যে গল্প বলেছি তা হয়তো এই সমাজের কারো না কারো জীবনের গল্প। উপন্যাসের চরিত্রগুলো শেষ অবধি লেখকের নিয়ন্ত্রণে থাকে নি যদিও। তবু বাধ্য হয়েই সময় ও শ্রম ব্যয়ে চরিত্রের কথাগুলো লিখে যেতে হয়েছে। পাঠকের ভালো লাগার মধ্যেই লেখকের সার্থকতা। এই উপন্যাস জীবনের, প্রেমের, দহনের আর যেন কষ্ট ভুলে থাকারও!
আরিফ মজুমদারের লেখা পাঠকপ্রিয় উপন্যাস- 'দুই জীবনের দহন' ও 'অনাকাঙ্ক্ষিনী'। বিভিন্ন দৈনিকের সাহিত্যপাতায় প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা গল্প। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। রাজধানী ঢাকায় জীবনযাপন হলেও জন্মস্থান চাঁদপুর সদর। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে গ্রামের শ্যামল-সবুজ পরিবেশে। সাহিত্যের বই পড়ার অভ্যাসই তার লেখক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। আগ্রহের জায়গা গল্প-উপন্যাস। আরিফ মজুমদারের লেখায় মানবমনের আনন্দ-বেদনা, মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, গ্রাম বাংলার সমাজ-বাস্তবতার চিত্র, সর্বোপরি নাগরিক সমাজের বিদ্রুপাত্মক আচরণ শব্দে শব্দে মূর্ত হয়ে উঠতে দেখা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তার লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। লেখালেখির কারণে পেয়েছেন- প্রজন্ম লেখক সম্মাননা স্মারক, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল (ডিএসইসি) লেখক সম্মাননা-২০২২।