প্রতিটি মেয়েই চায় স্বামীর সংসার শশুর-শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে করতে। যতদিন না শশুর-শাশুড়ি মারা না যায়, ততদিন সব মেয়েই একসাথে থাকতে চায়। স্বামী যতই দূরে থাকুক, বাড়িতে শশুর-শাশুড়ি, দে... See more
প্রতিটি মেয়েই চায় স্বামীর সংসার শশুর-শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে করতে। যতদিন না শশুর-শাশুড়ি মারা না যায়, ততদিন সব মেয়েই একসাথে থাকতে চায়। স্বামী যতই দূরে থাকুক, বাড়িতে শশুর-শাশুড়ি, দেওর-ভাসুর-ননদ থাকলে আর কী লাগে। বাড়িঘর যেন আনন্দে ম-ম করে। মায়ামতিরও ইচ্ছে ছিল তিলে তিলে গড়ে তোলা শশুর-শাশুড়ির সংসারে চাকরিজীবীর বউ না হয়ে কাজের মেয়ে হতে। নিজের সংসারে কাজ করতে লজ্জা কিসের? কিন্তু সে সুযোগ মায়ামতি পেল কোথায়? একের পর এক ঝড়-যন্ত্রণা একদিকে মায়ামতির স্বপ্ন-আশাকে চুরমার করে ভেঙে দিল, আরেকদিকে ভেঙে গেল আলেয়া বেগমের সুখের পুরনো সংসার। এর নেপথ্যের ঘটনা কী?
মোহাম্মদ অংকন, বর্তমান লেখকদের মধ্যে পরিচিত মুখ। শৈশব-কৈশোরে লেখালেখির হাতেখড়ি। নিয়মিত লিখছেন দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সাময়িকীতে। সাহিত্যের সব শাখাতেই আছে সমান দক্ষতা। দক্ষতা, আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব ও প্রতিশ্রুতিশীলতা ক্রমশ এই লেখককে আগামীর পথ দেখাচ্ছে। বছরব্যাপী নতুন বই প্রকাশের মাধ্যমে পাঠকমহলে চমক সৃষ্টি করে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যে এই প্রতিভাবান লেখকের অবাধ বিচরণে মুগ্ধ সবাই। তিনি ১৯৯৭ সালের ৭ নভেম্বর নাটোরের চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হওয়ার পরও লেখালেখির সূত্রে ঝুঁকে পড়েন সাংবাদিকতায়। দৈনিক মানবকণ্ঠে সাব-এডিটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও সরকারি চাকরি পাওয়ায় তা আর করা সম্ভব হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র কম্পিউটার বিভাগে কর্মরত আছেন। পুরস্কার ও সম্মাননা: ‘পাপড়ি-করামত আলী পাণ্ডুলিপি পুরস্কার-২০১৯’, ‘রূপচাঁদা: অদেখা বাংলাদেশ সেরা গল্পকার-২০১৯’, ‘চয়েন বার্তা সম্মাননা-২০২০’, ‘লিখিয়ে পাণ্ডুলিপি পুরস্কার-২০২০’, ‘প্রিয় বাংলা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার-২০২২’।
কামলাদের হাকডাক হয়তো ফয়েজ আলী লেপের ভেতর থেকেই শুনেছে; আমলে নেয় নাই। আমলে নিলেই বিপদ। আজ কেমন যেন তার আলসেমি লাগছে। পেটে ক্ষুধা ক্ষুধা ভাব বলেই শুয়ে শুয়ে খেজুরের গুড় দিয়ে মচমচা মুড়ি খাওয়ার কথা ভাবছে। ওদিকে গিন্নী হেঁসেল ঘর থেকে ডাক চড়াচ্ছে, ‘তোমাকে যে ডাইক্যা গ্যালো, কতা কি কানে যায় নাই?’ ‘আরে, এতো চ্যাচাও ক্যা?’ ‘ভালো কইরাই তো কইলাম।’ ‘হ। সকাল সকাল একটু মিষ্টি কইরা কতা কওয়া যায় না!’ ‘আর কত মিষ্টি কইরা কবো? কইতে কইতে তো বুড়া হয়া গেলাম।’ ‘এই জন্য কি আদর-যত্নও কমায় দিবা?’ ‘ঢং ধইরো না কইল। ধান-পান লাগাইন্যা হলিপারে বাঁচি। আর খ্যাঁচ খ্যাঁচ কইরবার মন চায় না। যে না বিঘে দশেক খ্যাত, তা লিয়ে কত কতা।’ ‘কতা তো তুমি কও, ছাওয়ালের মাও!’ ‘কিসের জন্য যে কই তা তো আমি জানি। আইজ খ্যাঁচ খ্যাঁচ করি বইলাই সংসারডা এতো বড়ো হইছে। মরদ মানুষের খ্যামতা নাই সংসার চালানোর।’ ‘অয়। চড়ায় যাও।’ - গিন্নীর সাথে ফয়েজ আলী একটু রসিকতা বাড়াতে থাকে ঘর থেকেই। সেটি আলেয়া বেগম বুঝতে পারে। কিন্তু সেও ছেড়ে দেওয়ার মানুষ না। বলে, ‘তাই যামু। মানুষ খালি খারাপ কবি দেইহা, যাই না।’ ‘হাহাহা। ভালো কইছো। এতো কতা বাড়াইও না। চাইডডো গুড়-মুড়ি দিলিই তো খাতি খাতি চড়ায় যাওয়া যায়। সকাল বেলা খালি প্যাটে বাইর অওয়া যায় না।’ ‘হেইডা তো কবা তুমি।’ ‘দিন দিন আদর-যত্ন লেওয়া ভুইল্যা যাইচ্ছো। ও মাথার চুল পাইকছে, এজন্যি?’ এবার আর গিন্নী আলেয়া বেগম কথা বাড়ায় না। কথা বাড়ালেই দেরি হয়ে যাবে। পুরুষ মানুষের সাথে কথা বললে বাড়ে, না বললে বাড়ে না। হেঁসেলে ভাতের হাড়ি বসিয়ে রেখে খাবারঘরে যায়।
----------------------------
লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা। আমার কাছে ভালো লেগেছে বলে শেয়ার করলাম।
Read More
Was this review helpful to you?
By Lekhachitro Prakashoni,
21 Aug 2022
Verified Purchase
‘মায়ামতি’ সমাজ বদলের উপন্যাস ::: হিমাদ্রি শর্মা :::
অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এ প্রকাশ হয়েছে তরুণ লেখক মোহাম্মদ অংকন-এর উপন্যাস ‘মায়ামতি’। ‘মায়ামতি’র গল্পটি আমাদের খুব চেনা। এই সমাজেরই গল্প। সমাজ-ব্যবস্থার সূচনালগ্ন থেকেই গল্পটি সকলের জানা। গল্পটি মূলত যৌতুক প্রথা ও এর সুদূরপ্রসারী কুফল নিয়ে। এ নিয়ে অসংখ্য গল্প-উপন্যাস ইতোমধ্যে বাংলা সাহিত্যে বিদ্যমান। তবুও লেখকের উপলব্ধিতে এসেছে, সমস্যাটি নিয়ে তাঁরও নিজের জায়গা থেকে কলম ধরা উচিত। হয়তো সেই উপলব্ধির জায়গা থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘মায়ামতি’! চেনা গল্প হলেও ‘মায়ামতি’ ফুটেছে সাবলীল উপস্থাপনায় ও ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সংলাপে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার গল্পের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। এই ব্যাপারে লেখকের দর্শন হলো- ‘আঞ্চলিক সংলাপ সামাজিক উপন্যাসের প্রাণ।’ ‘মায়ামতি’ উপন্যাসে গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থার বর্ণনা পাঠককে আপ্লূত করবে নিশ্চিত। কারণ, আমরা অধিকাংশজন গ্রামে বেড়ে ওঠা পাঠকমহল। গল্পে উল্লেখিত ঘটনাপ্রবাহ যেন আমাদেরই স্মৃতিঘেরা দিনগুলি! গল্পের এই দিকটা পড়লে যে-কারোর কৃষি ও কৃষকের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জায়গাটা আরও প্রবল হবে বলে আমার বিশ্বাস। গল্পের এই লাইনগুলো হয়তো সবচেয়ে বেশি সত্য আর সুন্দর! লেখক লিখেছেন, “মধ্যবিত্ত পরিবারে গিন্নিরাই হচ্ছে মূল চালিকাশক্তি। তাদের একটা আলাদা ব্যাংক থাকে, থাকে আলাদা হিসাবের খাতা। তাদের মাথায় সংসার চালানোর যে ব্রেন-বুদ্ধি আছে, ওমন বুদ্ধি দেশের সরকারেরও নাই।” উপন্যাসের শেষটা ছিল ট্রাজেডি যা পাঠকের চোখে জল আনতে শতভাগ সক্ষম। তরুণ এই লেখকের জন্য শুভ কামনা রইল। আগামীতে আরও সুন্দর কাজ আসুক। ‘মায়ামতি’ হোক সমাজ বদলের উপন্যাসের উদাহরণ।
Read More
Was this review helpful to you?
By Arafat Shaheen ,
08 Feb 2022
Verified Purchase
সময়ের তরুণ কথাশিল্পী মোহাম্মদ অংকন। আমি তার বেশকিছু লেখা পড়েছি। আশা করছি 'মায়ামতি' সেসব লেখার মতোই সুখপাঠ্য হবে। শুভকামনা জানাই।