"বন বালিকা" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: মানুষগুলাে নিচু গলায় কথা বলছে এবং মিতুল তখন বনবিবি শব্দটা কয়েকবার শুনতে পেল। এই বাওয়ালিরা বিশ্বাস করে বনবিবি এই সুন্দরবনের দায়িত্বে থাক... See more
"বন বালিকা" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: মানুষগুলাে নিচু গলায় কথা বলছে এবং মিতুল তখন বনবিবি শব্দটা কয়েকবার শুনতে পেল। এই বাওয়ালিরা বিশ্বাস করে বনবিবি এই সুন্দরবনের দায়িত্বে থাকে সব সময় সবাইকে দেখেশুনে রাখে। তাকে দেখে মানুষগুলাে মনে করছে সে বনবিবি হয়ে তাদের দেখা দিয়েছে। মিতুল নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে রইল। সে দেখতে পেল মানুষগুলাে নিজেদের বােঝা থেকে কয়েকটা ফুল, কিছু কলা, একটা কলাপাতায় কিছু ভাত এরকম কিছু জিনিস গাছের নিচে রেখে মাথা নিচু করে কয়েকবার প্রণাম করল। একজন বিড় বিড় করে বলল, “বনবিবি বনবিবি প্রণাম জানাই তুমি বিনা আমাদের রক্ষা নাই।”
▪️বইয়ের নাম : বন বালিকা ▪️রিভিউ লিখেছেন : নবনীতা প্রামানিক
▪︎কাহিনি সংক্ষেপ :
ছয় বছর আগে আফজালকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বেচারা তখনও জানত না যে, মিথ্যা মামলার কবলে আটকা পড়তে চলেছে সে! এগিয়ে চলে সময়, আফজালের মুক্তির খবর আসে না আর।
এদিকে মিতুলকে নিয়ে শুরু হয় আফজালের স্ত্রী, রাহেলার নতুন করে বাঁচার লড়াই। ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে দারুণ বিপাকে পড়ে যায় রাহেলা। কারণ? কারণটা ঠিকঠাক জানতে হলে আবারও ফিরে যেতে হবে ছয় বছর আগে। সেবার বিস্ময়কর এক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছিল রাহেলা; যার ফলে মিতুলের পরবর্তী জীবনটা বদলে গিয়েছিল অদ্ভুতভাবে। এবং মিতুল নিজের মধ্যে আবিষ্কার করেছিল, পশুপাখির ভাষা বোঝার মতো চমকপ্রদ এক তথ্য! হ্যাঁ; আমরা যা বুঝি না - মিতুল তাই বোঝে। আমরা যা পারি না, মিতুল তাই পারে। আকাশের পাখি থেকে শুরু করে বনের বাঘ - মিতুল সবার ভাষা জানে। সুন্দর না?
সত্যিই সুন্দর! কিন্তু সুন্দর এই ব্যাপারটাকে অনেকেই আবার সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। তারপর? তারপর মিতুলের জীবনে বিপদ এসেছে নতুন নতুন মোড়কে। ছোট্ট মিতুল কিন্তু ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসেনি। পশুপাখি বন্ধুদের সহায়তা এবং নিজের উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিহত করেছে সকল ধরনের বিপদ! এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়; যাদের আমরা পশুপাখি বলি, তারা-ই মিতুলের বন্ধু! হ্যাঁ; প্রকৃতি তাকে বন্ধু হিসেবে স্বীকার করেছে। পরবর্তীতে প্রকৃতির এই স্বীকৃতিকে বাকি সবাই “বনবিবি” হিসেবে অভিহিত করে। এবং মিতুল হয়ে ওঠে বন বালিকা!
“বনবিবি বনবিবি প্রণাম জানাই তুমি বিনা আমাদের রক্ষা নাই।”
ঘটনাক্রমে পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়ায়; যার ফলে বনের মাঝে পশুপাখি বন্ধুদের নিয়ে দিন কাটাতে শুরু করে বন বালিকা, মিতুল। এবং মিতুল জানতে পারে, মানুষের হিংস্রতার পরিমাণ বনের পশুর চেয়েও অনেক গুণ বেশি! এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে; মিতুল কি পারবে হিংস্র মানুষদের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে? তাছাড়া নির্দোষ আফজালকে জেল থেকে মুক্ত করে এই গল্পকে সুন্দর একটা সমাপ্তি উপহার দিতে পারবে কি ছোট্ট মিতুল?
▪︎পর্যালোচনা :
আমরা এখন মানবসভ্যতার ভয়াবহ এক পর্যায়ে এসে উপস্থিত হয়েছি। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব অদূর ভবিষ্যতে আমাদের কোন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে; সেই ব্যাপারে এই মুহূর্ত থেকেই সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মূলত এই দুর্দিনে টিকে থাকতে চাইলে ফিরে যেতে হবে বনের কাছে। ছাঁয়া ঢাকা সুশীতল গাছের তলায় খুঁজে নিতে হবে নির্ভরতার আশ্রয়। তীব্র দাবদাহে শুকিয়ে যাওয়া ভূমিকে আবারও সবুজ করে তুলতে হবে। এবং গাছ লাগাতে হবে। প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে।
ভাবছেন; পর্যালোচনা অংশের শুরুতে কেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং সবুজায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরলাম? কারণ সবুজায়ন তথা বনের প্রতি মমত্ববোধ জাগিয়ে তোলার জন্য “বন বালিকা” শীর্ষক এই বইটাকে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। বইয়ের পাতায় ছোট্ট মিতুলের সাথে প্রকৃতির বন্ধুত্ব তৈরির যে চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন লেখক, সেটাকে আগত গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রতিহত করার ঠিকঠাক পন্থা হিসেবে অভিহিত করলে ভুল হবে না। এদিক দিয়ে সাম্প্রতিক প্রবণতা সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে সুন্দর একটা বার্তা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে “বন বালিকা” যথেষ্ট কার্যকর।
কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়; “বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী” হিসেবে চিহ্নিত এই বইটার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সায়েন্স রিলেটেড টার্মের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা! দূরবীনের ব্যবহার, আলট্রা সাউন্ড, মনিটরিং ডিভাইসের মতো টুকটাক টেকনোলজি বিষয়ক আলাপ ছাড়া কিছুই সেভাবে চোখে পড়েনি; যার কারণে বইটাকে “বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী” হিসেবে অভিহিত করা যায়। কাজেই সাইফাই ঘরানার বইয়ের মজা পাওয়ার উদ্দেশ্যে “বন বালিকা” বেছে নিতে চাইলে খানিকটা নিরাশ হতে হবে। তাই বলে বইটা যে উপভোগ্য নয়, সেটা বললেও খুব ভুল হয়ে যাবে!
কিশোরপাঠ্য উপন্যাস হিসেবে “বন বালিকা” অবশ্যই উপভোগ্য। অ্যাডভেঞ্চার আর ফ্যান্টাসির মিশেলে এখানে যে গল্পটা বলার চেষ্টা করেছেন লেখক, সেটা কমবেশি সবার-ই পড়তে ভালো লাগবে। কেন্দ্রীয় চরিত্র; মিতুলসহ গল্পের প্রয়োজনে আসা অন্যান্য চরিত্রগুলোর নির্মাণ অসাধারণ।
তাছাড়া লেখকের দুর্দান্ত স্টোরিটেলিং তো আছেই। হ্যাঁ; “বন বালিকা” বইয়ের গল্প বলার ধরনটা খুব সুন্দর। কিশোরপাঠ্য উপন্যাস হলেও বড়দের পড়তে খারাপ লাগার কথা না। ভেতরের পাতার ইলাস্ট্রেশনটা মন কেড়েছে আলাদাভাবে। তবে এত কিছুর পরও; গোড়ায় গলদের কথা ভুলে গেলে চলবে না! জনরা নির্বাচনে সচেতন হতে হবে!
[ একনজরে বইয়ের তথ্য ]
▪︎ বইয়ের নাম : বন বালিকা ▪︎ লেখকের নাম : মুহম্মদ জাফর ইকবাল ▪︎ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম : তাম্রলিপি ▪︎ প্রচ্ছদ : আরাফাত করিম ▪︎ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৬০ ▪︎ মুদ্রিত মূল্য : ৩০০ টাকা
মূলত প্রকৃতির প্রতি এক ধরণের ভালোবাসা থেকেই বইটির কাহিনী রচিত হয়েছে। প্রকৃতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত গাছপালা,পশু-পাখি এই সব কিছুর সাথে এক মেয়ের নিবিড় স্নেহের সম্পর্ক নিয়ে এই কাহিনী।
''বনবিবি বনবিবি প্রণাম জানাই তুমি বিনা আমাদের রক্ষা নাই।"
প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ করার অদ্ভুত ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছয় বছরের এক মিষ্টি মেয়ে মিতুল যার মা রাহেলা আর বাবা আফজাল ছাড়া আপন কেউ নেই কিন্তু মিতুলের জন্মের এক মাস আগেই গ্রামের জব্বার মেম্বর মিথ্যা মামলা দিয়ে আফজালকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। এর পরেই শুরু হয়েছে তাদের কষ্টের জীবন কিন্তু এই কষ্টকেও ছাপিয়ে গেছে মিতুলের প্রাপ্ত সেই অদ্ভুত ক্ষমতাটি যার কারণে মহাবিপদে পড়তে হয় তার পুরো পরিবারকে। কি সেই বিপদ? শেষ পর্যন্ত কি মিতুল সেই বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারবে? কিভাবে পারবে সে? এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে বইটি পড়তে হবে।
বইটিতে একটি মেয়ের প্রকৃতি ও জীবপ্রেমের বর্ণনা মুগ্ধ করার মতো! প্রকৃতিকে যারা ভালোবাসেন, বিশ্বাস করেন, নিজেদের মধ্যে লালন করেন তারা অবশ্যই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি খারাপ লাগবে না।
যদিও বইটি কিশোর-কিশোরী/বাচ্চাদের জন্য বেশি উপযুক্ত কিন্তু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর স্বাদ পেতে যে-কোনো বয়সের মানুষের জন্য এটি একটি দারুণ বই! স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, "জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর"। ঐশ্বরিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত মিতুলের প্রকৃতি ও প্রকৃতির জীবদের সাথে যে স্নেহের সম্পর্ক রয়েছে তা পাঠকদের হৃদয়ে ভালোবাসা জাগাতে বাধ্য! মাত্র ছয় বছর বয়সী মিতুল নামক কেন্দ্রীয় চরিত্রটির প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ,বোধ-বুদ্ধি, সাহসিকতা, নিজের পরিবারকে বিপদ থেকে বাঁচানো এই সব কিছুই বইটির প্রতি এক ধরণের ভালোবাসা তৈরি করতে পারে।
?লেখক পরিচিতি ও কর্মযজ্ঞ: ....................................................
১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর, সিলেটে মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম নেন। তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন,পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। কর্মজীবনে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠারো বছর পর দেশে ফিরে এসে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৮ সালে সেখান থেকে অবসর নেন। তাঁর স্ত্রী প্রফেসর ইয়াসমিন হক, পুত্র ড.নাবিল ইকবাল এবং কন্যা ড.ইয়েশিম ইকবাল। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে রাশা,আমার বন্ধু রাশেদ,দীপু নাম্বার টু,কেপ্লার টুটুবি, সাইক্লোন ইত্যাদি। বিশেষত শিশু-কিশোরদের সাহিত্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন এই লেখক।
Read More
Was this review helpful to you?
By jheelam biswas,
10 Apr 2021
Verified Purchase
প্রথমেই বলে রাখি প্রকাশক কেন এই বইটাকে কেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হিসেবে প্রচার করছে তা বোধগম্য হল না। এটা মোটেও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নয় বরং ফ্যান্টসি/ সুপারহিরো/ কিশোর উপন্যাস ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়। মিতুল নামে ছয় বছরের একটি মেয়ে পশুপাখিদের সাথে কথা বলতে পারে, তার বাবা বিনা অপরাধে জেলে। এজন্য তাকে স্কুলে বিভিন্নভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়। এই পর্যন্ত কাহিনী ঠিকঠাক ছিল। মিতুলের সামাজিক হেনস্থা, মিতুলের মা রাহেলার একা বেঁচে থাকা আর মেয়েকে বড় করার সংগ্রাম, এর মধ্যে মেয়ের আজব ক্ষমতা, মিতুলের সাথে তার বাবার জেলে দেখা করার অভিনব পদ্ধতি, এই সবটুকু খুবই মন ছুঁয়ে যাবার মত। বিশেষ করে যখন এই রূঢ বাস্তবতা এক ছয় বছরের মেয়ের জবানীতে দেখানো হয়। অনেকটা ছোটবেলায় পড়া জাফর ইকবাল স্যারের বইগুলির মত আমেজ পাচ্ছিলাম। ফাঁকে বলে রাখি, জাফর ইকবাল স্যার ছোটবেলা থেকে আমার খুব প্রিয় লেখক, বিশেষ করে উনার সায়েন্স ফিকশন সমগ্র ১ম এবং ২য় খন্ড যে কয়বার পড়েছি তার হিসেব নেই। কিন্ত গত কয়েক বছর ধরে উনার লেখাগুলি কেমন যেন ফর্মূলায় ফেলা মনে হচ্ছিল, সেই আগের স্বাদটাই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। এবারের বইটা পড়ে আশা করছিলাম যে আগের সেই আমেজটা বুঝি আবার ফিরে আসছে, কিন্তু না, ৭০ পাতার পরেই আবার সেই আগের ফর্মূলায় চলে গেল। মিতুলের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে গ্রামের জব্বার মেম্বার, সে মিতুলকে অপহরন করে আমেরিকায় বেচে দেবার ফন্দি করে। কিন্তু মিতুল তার পশু বন্ধুদের সাহায়্যে সুন্দরবনে পালিয়ে যায় এবং বাঘের সাথে বন্ধুত্ব করে, কিন্তু তাকে দেখে ফেলে কিছু বিদেশী এবং তাকে নিয়ে গবেষনার প্ল্যান করে। কি এটুকু পরিচিত মনে হচ্ছে না? হ্যাঁ, এখান থেকে ফর্মূলায় চলে যাওয়া শুরু। এর আগে মিতুলের যে শিশুসুলভ আচরন ছিল, এবারে এসে তা উধাও। তাই এতক্ষন কাহিনি কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য লাগলেও এরপরে আর বইটা ভাল লাগার দিকগুলি হারায়। ক্ল্যাইম্যাক্সটাও গতানুগতিক। সম্ভবত বইটা ৮-১০ বছর বয়সীরা, যারা প্রথমবার জাফর ইকবাল স্যারের বই পড়ছে, তাদের ভাল লাগবে। কিন্তু যারা আগেই উনার কপোট্রনিক সুখদুঃখ, ক্রুগো, ট্রাইট্রন একটি গ্রহের নাম, টুকুনজিল, প্রজেক্ট নেবুলা, ফোবিয়ানের যাত্রী্... ইত্যাদি মাস্টারপিস পড়েছেন, তারা হতাশ হবেন। তবে প্রচ্ছদটা এবং এন্ডপেপারের আর্টটা অসাধারন।
Read More
Was this review helpful to you?
By Kazi Nishat Aunjum,
15 Jun 2021
Verified Purchase
বন বালিকা মুহম্মদ জাফর ইকবাল
গল্পটা এক বাচ্চা মেয়ের যে প্রকৃতি ভালোবাসে। বাচ্চা মেয়েটা জন্ম থেকেই যেন রহস্য জালে ঘেরা। আশ্চর্য এই ক্ষমতার জন্য জন্ম থেকে কপালে ভোগান্তি নেহাত কম পোহাতে হয়না। গল্প বিকশিত হয়েছে এই বাচ্চা মিতুলের নানা কীর্তি কলাপের মধ্য দিয়ে।
শুরুতে মাতৃত্বের যে অসাধারণ বর্ণনা আছে মন ছুঁয়ে যায়। সিংগেল মা হিসেবে মিতুলের মতো অদ্ভুত মেয়েকে বড় কররাটাও কম সংগ্রামের না।
বাচ্চাদের দূরন্তপণা, শিশু সুলভ আচরণ, প্রকৃতির নিবিড় স্পর্শে বেড়েওঠার গল্পটা সুন্দর দৃশ্যপট চোখের সামনে তুলে ধরে। একই দিকে আবার ছোট্ট শরীরের যেন এক বড় মানুষ পরিপক্কতা, কর্মকাণ্ড পাঠকের মন ধরে রাখবে।
সুন্দর পরিবেশে ভিলেন হয়ে গ্রামের মেম্বারের আগমণ থেকেই যেন থ্রিলারের সূত্রপাত হয়। দুষ্টু লোক বাচ্চা মিতুলকে নানা ভাবে পর্যদুস্ত করার চেষ্টা করলে নিজেই নাকানিচুবানি খায় বাচ্চা মেয়েটার কাছে।
মনোমুগ্ধকর সুন্দরবনের গা ছমছমে গহীন বনে বাওয়ালিদের দেখা মেলে যেন বনবিবির সাথে। বাঘের পিঠে চড়ে যে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে দাপটের সাথে।
মিতুলের আরেকটি যে জগৎ ছিল, যা গল্পের মুখ্য কাহিনী, তা অসাধারণ। সাধারণ মেয়ে থেকে তো যেন বনবিবি বনে যাচ্ছিল সে। তবে মেয়েটার শান্তি যেন কখনই দীর্ঘায়িত হয়না। আবার আসে এক বিদেশি চক্র। তবে সাহসী আর বুদ্ধিমত্তায় সে সব জয় করে ফেলে। থ্রিলিং এর স্বাদটা এই অংশে বেশ মনকাড়া।
একটা সাধারণ বৈজ্ঞানিক কাহিনীর মধ্যেও লেখক সমাজ ও মানুষের চিন্তার যে দর্পণ প্রতিফলিত করেছেন তা গভীর ভাবে ভাবাবে। দেশের অবস্থা ও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন তুলে ধরার ধরণটা অসাধারণ।
অনেক সময় বাচ্চারাও যে অনেক বড় হয়ে ওঠে এই বই সেই কথা বলে যায় নিদারুণ ভাবে। তাদের সততা, সাহসিকতা, মনোবল অনেক বড় মানুষকেও হার মানাবে।
গল্পের মধ্যে আমাদের বড় আশীর্বাদ সুন্দরবনের বিপদের কথা লেখক তুলে ধরেছেন। ভয়াবহতার ছোঁয়া দিয়ে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
শিশু -কিশোরদের জন্য অসাধারণ বই। তবে লেখকের লেখার মধ্যে একঘেয়েমিতার হালকা টোন পাওয়া যায়। তার আগের সাইন্স ফিকশন পাঠক আগেই কিছু কিছু প্লট আঁচ করে ফেলতে পারে সহজেই।
তবে শেষটা সুন্দর। মন শীতল করবে। একটা সুন্দর মেসেজের কাহিনী।
Read More
Was this review helpful to you?
By Apurba Mazumder Nikkan,
16 Sep 2022
Verified Purchase
মুহম্মদ জাফর ইকবালের “বন বালিকা” বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হলেও সম্পূর্ণ আলাদা। এর কেন্দ্রিয় চরিত্র মিতুল। সে আমাদের মতো সাধারণ, তবে অনর্গল কথা বলতে পারে সব পশুপাখির সাথে, বুঝতেও পারে! মিতুল প্রকৃতিকে ভালোবাসে ; বিশ্বাস করে এই পৃথিবীতে মানুষের যেমন অধিকার আছে, ঠিক তেমনি অধিকার আছে প্রকৃতির প্রতিটি পশুপাখি-বৃক্ষ-লতা-কীট-পতঙ্গের। মিতুলের মা রাহেলা কাউকে জানাতে চান না যে, মিতুল এই পশুপাখির সাথে কথা বলতে পারে—বুঝতে পারে। কারণ মন্দ মানুষেরা অনেককিছু করতে পারে। গ্রামের জব্বার মেম্বার লোকটা মানুষ হিসেবে খুব খারাপ, মিতুলের বাবাকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে অনেকদিন ধরে জেলে পাঠিয়েছে সে। একদিন মিতুল গ্রামের ষাঁড়ের লড়াইতে গিয়ে কালাচান ষাঁড়ের সাথে ভাব জমায়, ষাঁড়ের লড়াই আর হয় না! জব্বার মেম্বার এটা বুঝতে পেরে মিতুলকে বিদেশে পাচার করে মোটা টাকা পেতে চায়। সে মিতুলকে ধরে আনায়। আসলে মানুষের চেয়ে খারাপ আর হিংস্র আর কোনো প্রাণী নেই। কিন্তু মিতুল জব্বার মেম্বারের কালাচান ষাঁড়ের পিঠে চড়ে চলে যায় সুন্দরবনে। মিতুল কীভাবে সুন্দরবনে যাবে? কীভাবে জব্বার মেম্বারের হাত থেকে রেহাই পাবে মিতুল, মিতুলের মা আর বাবা? আর তার থেকে বড় কথা হলো, সুন্দরবনে গিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাথে সে কীভাবে বেঁচে থাকবে? মিতুল কী আবার ফিরে আসতে পারবে? এসব কৌতূহল মেটাতে হলে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে। আর সবচেয়ে মজার কাণ্ড হলো, এই বইটিতে অনেক জায়গায় খুব হাসি লাগবে—হাসতে-হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে! যেমন—“কাঁউয়া!”-“সাদা চামড়ার বাঁন্দর!” পড়ে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি, শেষ না করে উঠতেই পারি নি! বইটি সত্যিই এত ভালো লেগেছে যে, বলে বোঝানো যাবে না! সবকিছুই মৌলিক। একটুও হতাশ হইনি। সত্যি কথা বলতে কী, খুব আনন্দ আর অভিযানের শিহরণ বইটি পড়ে পেয়েছি।
Read More
Was this review helpful to you?
By Sajid Bhuiyan ,
11 May 2021
Verified Purchase
#বুক_রিভিউ :
রাহেলা বলল, "এখন সবাই বুঝে গেল কীনা?" মিতুল আমতা আমতা করে বলল, "না- আম্মু মনে হয় কেউ বুঝেনি। শুধু মনে হয় বারেক......" রাহেলা একটু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল, এই ছোট মেয়েটিকে সে কেমন করে বোঝাবে পৃথিবীটা কত জটিল। কত ভয়ংকর। ("বন বালিকা " বইয়ের অংশবিশেষ) ২০২১ সারে প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের নতুন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী "বন বালিকা "। এখানে মিতুল নামক মেয়ের বিশেষ একটা ক্ষমতা রয়েছে, পশু-পাখির কথা বোঝার ও তাদের সাথে কথা বলার ক্ষমতা। কিন্তু একদল লোভী মানুষেরা এই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে চায়। মিতুল মুখোমুখি হয় এই সব লোভী মানুষদের নিষ্ঠুরতা ও স্বার্থপরতার। অতঃপর ........... উত্তর খুঁজে পেতে পড়ে ফেলুন এই সায়েন্স ফিকশনটি। বইটি ভালো লাগার একটি কারণ হচ্ছে লেখক লোকেশন হিসেবে বেছে নিয়েছেন সুন্দরবন। তিনি বিদঘুটে কিংবা জটিল যন্ত্রের নাম ব্যবহার করেননি। যাদের জাফর ইকবাল স্যারের সায়েন্স ফিকশনের বিরুদ্ধে একঘেয়েমিতার অভিযোগ, তারা এটি পড়ে দেখতে পারেন। আরেকটি কথা, পশু-পাখির ও যে অনুভূতি আছে কিন্তু ভাষার অভাবে তারা তা প্রকাশ করতে পারে না লেখক তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
বইটা অনেক ভালো লেগেছে। তবে কাহিনী টা অনেকটা রিপিটেটিভ। যারা জাফর ইকবাল স্যারের ভক্ত (আমার মতো) তারা অন্যান্য বইয়ের সাথে লংক করতে পারবে। যেমন, সেরিনা, ইকারাস। প্লট সেম কাহিনীটেকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করেছেন শুধু। তারপরেও ভালো লেগেছে
Read More
Was this review helpful to you?
By Mahbub Hossain Khan,
26 Jun 2021
Verified Purchase
জাফর ইকবাল স্যারের সাই ফাই উপন্যাস গুলো এখন খুব এক ঘেঁয়েমি হয়ে গেছে। স্যারের প্রথম দিকের উপন্যাস গুলো কে খুব মিস করি। এই বইটা কোনো ভাবেই সায়েন্স ফিকশন হতে পারে না। এইটা একটা ফ্যান্টাসি বই।
Read More
Was this review helpful to you?
By Maliha Alam,
14 Dec 2023
Verified Purchase
বরাবরের মতোই মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের সহজ সাবলীল ভাষায় লেখা বইটি। টিনেজার কিংবা শিশুদের বেশ ভালো লাগবে আশা করি।
Read More
Was this review helpful to you?
By Shahriar Nabil ,
12 Aug 2023
Verified Purchase
খুব সুন্দর একটি বই। আসলে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা বই। ভালো না হয়ে যাবে কই? ধন্যবাদ রকমারি ❤️?
Read More
Was this review helpful to you?
By নিয়েল মুহাম্মদ,
23 Feb 2022
Verified Purchase
স্যারের অন্যান্য বই সমুহের মতন এটিও একটি মুগ্ধকর বই । একটানা পড়ে ফেলার মত রসদ সমৃদ্ধ ।
Read More
Was this review helpful to you?
By Sakin Sara,
03 Jul 2022
Verified Purchase
It's just awesome service by the rokomari. Thanks for the product
Read More
Was this review helpful to you?
By Md. Amanul Huque,
14 Jul 2021
Verified Purchase
Its a good science fiction, but few improvement is possible.
Read More
Was this review helpful to you?
By sajid,
26 Mar 2021
Verified Purchase
গল্পটা অনেক ভালো ছিলো। অনেক সহজ ভাষায় লেখা সুন্দর বই