সোনালী যুগের গল্পগুলো সালাফে সালেহিনের অনুপম ও অনুসৃত ব্যক্তিত্ব, জগদ্বিখ্যাত ও বিদগ্ধ আলেম, শায়েখ আবুল ফারজ আব্দুর রহমান বিন আলি বিন মুহাম্মদ; যিনি ইবনে জাওযি নামেই সুবিদিত (মহান আল্লাহ তাঁকে সুশীতল রহমতের চাদরে ঢেকে নিন) বলেন—
সমস্ত প্রশংসা সুমহান আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে দ্বীনি ইলম হাসিলের তওফিক দিয়েছেন এবং সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। যিনি আমাদের অন্তরের সুপ্ত বহু তামান্না ও অগণিত আশা বাস্তবে রূপ দেন।
দরুদ ও সালাম পেশ করছি সৃষ্টিকূলের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি, এবং দ্বীনের একান্ত ও একনিষ্ঠ ধারক বাহক আপামর সাহাবায়ে কেরামের প্রতি।
বস্তুত, ওয়াজ-নসিহত হলো আত্মশুদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশিকা এবং মুমিনের রুহের খোরাক। এর মাধ্যমেই পরিশুদ্ধ হয় মানব- আত্মা। এজন্যে তাজকিয়া বা আত্মশুদ্ধির মজলিসগুলোতে বুযুর্গদের উপদেশ-সম্বলিত বাণী ও ঘটনা বেশি বেশি আলোচনা হওয়া চাই। প্রখ্যাত তাবেয়ি মালেক ইবনে দিনার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন— 'ওয়াজ-নসিহতের মজলিসগুলো যেন জান্নাতেরই অংশবিশেষ।' জগদ্বিখ্যাত সুফিসাধক জুনাইদ বাগদাদি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন—'আত্মশুদ্ধিমূলক উপদেশ ও বাণী হলো গুনাহ ও নফসের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে ঢালস্বরূপ।' কেউ একজন তাকে জিজ্ঞেস করে, এ কথার কোন প্রমাণ আছে কি? উত্তরে তিনি পবিত্র কুরআনের এ আয়াতটি পড়ে শোনান, [যার অর্থ] 'আমি আপনার কাছে বিগত নবিদের ঘটনাবলি বর্ণনা করে আপনার হৃদয়কে দ্বীনের ওপর অবিচল রাখি।'
আলহামদুলিল্লাহ, বক্ষমাণ গ্রন্থে আমি সুসংক্ষেপে পাঁচ শতাধিক দিল-কাড়া ঘটনা বর্ণনা করেছি। পাঠকের পাঠ ও শ্রোতার শ্রবণ-সাবলিলতার সুবিধার্থে ঘটনাগুলোর বর্ণনাসূত্র আমি বিলোপ করে দিয়েছি। দয়াময় আল্লাহই উত্তম তওফিকদাতা। আমার সবকিছু তাঁরই দয়া ও করুণা।
আব্দুর রহমান বিন আলি বিন মুহাম্মদ বিন আবুল ফারাজ বিন আল-জাওযী , প্রায়শই সংক্ষেপে ইবনুল জাওযী ( আরবি : ابن الجوزي, ইবনে আল-জাওযী'; ১১১৬ - ১৬ জুন ১২০১ খ্রিস্টাব্দ) বা সুন্নি মুসলমানদের কাছে ইমাম ইবনুল জাওযী ছিলেন একজন আরব মুসলমান আইনজ্ঞ, প্রচারক, বক্তা, ধর্মবিদ্যাবিদ, ইতিহাসবিদ, বিচারক, এবং সাস্কৃতিক ভাষাবিদ । তিনি হাম্বলি মাযহাব বাগদাদে শহরে প্রচারে অক্লান্ত ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন এবং তিনি আবু বকরের বংশোদ্ভূত ছিলেন,ইবনুল জাওযীর ছেলেবেলা থেকেই পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর সেই যুগের সর্বাধিক খ্যাতিমান বাগদাদী আলেম ইবনে আল-জাগুনি (মৃত্যু ১১৩৩), আবু বকর আল-দিনাওয়ারী (মৃত্যু ১১১৭-৮), রায্যাক্ব আলী গিলানী (মৃত্যু ১২০৮), এবং আবু মনসুর আল-জাওয়ালিকা (মৃত্যু ১১৪৪-৫) সহ অনেক পন্ডিতদের অধীনে শিক্ষা নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।