"মাসুদ রানা : মৃত্যুঘণ্টা" বইয়ের ভেতর থেকে: খুন হয়ে গেলেন জেনেটিক্স বিজ্ঞানী আহসান মােবারক। এবার খুন হবে তার মেয়ে মােনা? বােমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল বিজ্ঞানীর বাডি। ইউএন অফিসে কে বা কারা দিল ভাইরাস মাখা চিঠি? এ কোন কাল্ট, লড়ছে ধর্মের বিরুদ্ধে? দুবাইয়ের বুর্জ আল আরব হােটেলের বলরুমে রানার সঙ্গে বেধে গেল মরণপণ লড়াই! সত্যিই কি অমৃত তৈরি করছিল বাপ-বেটিতে মিলে? মস্ত ঝুকি নিয়ে খুঁজতে গেল ও উত্তপ্ত মরুভূমিতে।...তারপর? মােনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে ইরানের পরিত্যক্ত এক দ্বীপে রানা দেখা পেল ভয়ঙ্কর এক শত্রুর! কণ্ঠে অকৃত্রিম ঘৃণা নিয়ে সে বলল: ‘এবার পারলে বাচতে চেষ্টা করাে দেখি, বাঙালি গুপ্তচর! বুঝল রানা, সত্যিই আজ বেজে গেছে ওর মৃত্যুঘণ্টা!
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন যে মানুষটি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণী। বিদ্যুৎ মিত্র এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। পাঠকদের কাছে পরিচিত প্রিয় কাজীদা নামে। প্রখ্যাত গণিতবিদ ও সাহিত্যিক বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ও মা সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী শামসুদ্দিন নওয়াব। পরিবারের সঙ্গীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই ‘কুয়াশা’ সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’ পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার। সালটা ১৯৬৫, মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে এলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি। সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বই সমূহ এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিসবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই সমগ্র রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের যে পিপাসা পাঠকের মনে তৈরি করেছে তা মেটাতে সাড়ে চারশোরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়ছে সেবা প্রকাশনীকে, যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।
গোপন এক কাল্টের হাতে খুন হয়ে গেলেন বাংলাদেশী জেনেটিক্স বিজ্ঞানী আহসান মোবারক। হঠাৎ করেই যেন মাটি ফুঁড়ে বের হয়েছে এই কাল্ট। কোনও সিকিউরিটি সংস্থার কাছেই ওদের অতীতের কোনও তথ্য নেই। ভয়ঙ্কর এই কাল্ট খুব নির্দয়ভাবে নির্যাতন করে খুন করেছে বাঙালি বিজ্ঞানীকে। জানা গেছে মৃত্যুর আগে অদ্ভুত এক ভাইরাস নিয়ে কাজ করছিলেন তিনি। রওনা হয়ে গেছে রানা। খুঁজে বের করবে ঐ কাল্টকে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে মৃত বিজ্ঞানীর মেয়ে মোনা মোবারকের। মোনাও বাবার মতই জেনেটিক্স বিজ্ঞানী।
রানার সঙ্গী হলো আমেরিকান ন্যাশনাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর এজেন্ট এলেনা রবার্টসন। এই অপারেশনে ওর জড়িত হওয়ার কারণ ঐ ভাইরাস। ইউএন অফিসের এক মহিলা কর্মকর্তা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। একটা চিঠির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া হয় তার মধ্যে। জানা যায় এই ভাইরাস নিয়েই কাজ করছিলেন আহসান মোবারক।
এদিকে এর সাথে জড়িয়ে আছে প্রাচীন এক ইতিহাস। খুঁজে বের করতে হবে জীবন-বৃক্ষ নামের ঐ গাছকে যার বর্ণনা ছিল ওল্ড টেস্টামেন্টসহ আরও অনেক ধর্মগ্রন্থে। বলা হয়ে থাকে এই গাছের ফল এবং বীজে আছে এমন এক ভাইরাস যা মানবদেহের ক্ষয়রোধ করে। বেড়ে যায় আয়ু। গোপন ঐ কাল্টও ঐ জীবন-বৃক্ষের পিছনে লেগেছে। কে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাচ্ছে ঐ ভাইরাস বুঝতে পারছেন?
অনেকদিন পর রানা সিরিজের ইসাটাবুর অভিশাও পড়ে খুব ভালো লেগেছিল। সেই ভালো লাগার রেশ থেকেই শুরু করেছিলাম মৃত্যুঘন্টা। যদিও মৃত্যুঘন্টা ইসাটাবুর অভিশাপের আগে বের হয়েছিল, কিন্তু আমার হাতে পৌঁছাতে দেরি করেছে। যাইহোক, যা বলছিলাম অনেক আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম মৃত্যুঘন্টা। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে আমাকে। ইসাটাবুর অভিশাপের ধারেকাছেও নেই এটি। প্রথম ১০০ পৃষ্ঠা যথেষ্ট বোরিং ছিল, পড়তে সময় লেগেছে অনেক। ১০০ পৃষ্ঠার পর কাহিনীতে গতি এসেছে কিন্তু সেটাও খুব ধীরগতি।
প্রচ্ছদ একদমই ভালো লাগেনি। উপরে দুবাই এর বুর্জ আল আরব এর ছবি থাকলেও কাহিনীতে বুর্জ আল আরব ছিল সামান্য কিছু সময়ের জন্য মাত্র। প্রচ্ছদ আরও সুন্দর হতে পারতো। একটা অসংগতি দেখে মেজাজ খারাপ হয়েছে খুব। আগের বইগুলোতে পিছনের কোনও কাহিনীর উল্লেখ থাকলে স্টার সিম্বল দিয়ে সেই বইয়ের নাম উল্লেখ থাকতো। কিন্তু এই বইয়ে পুরনো দুটা কাহিনীর উল্লেখ থাকলেও বইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া যেসব ইংরেজি শব্দের বাংলা বানান আমরা একভাবে দেখে অভ্যস্ত ছিলাম সেগুলো বদলে গেছে। কিছু উদাহারণ দেই, সাইজ- সাইয, ক্লোজ-ক্লোয, ওয়াটার-ওঅটার। এছাড়া যেসব ইংরেজী শব্দের বাংলা বানানে বর্গীয় জ ছিল সেগুলো সব বদলে অন্তস্থ য হয়ে গেছে। আমার মত অনেক পুরনো পাঠকেরই ব্যাপারটা চোখে লাগার কথা।
কাহিনীর তুলনায় একশন যেটুকু দরকার ছিল, যেটুকু সাসপেন্স দরকার ছিল তা পাইনি। ছোট ছোট টুইস্টগুলোও ঠিকভাবে ফুটে উঠেনি। কাহিনীর দুর্বলতার কারণে আগে থেকেই টুইস্টগুলো অনুমেয় ছিল। তবে ধৈর্য্য ধরে অর্ধেক পর্যন্ত পড়তে পারলে বাকিটা শেষ করতে পারবেন এক বসায়। কিন্তু অর্ধেক পর্যন্ত পড়তেই আমার বারোটা বেজে গিয়েছিল। আশা করব পরবর্তীতে আরও সুন্দর কিছু রানা উপহার পাব আমরা।
Read More
Was this review helpful to you?
By Abrar habib ,
31 Oct 2019
Verified Purchase
বুক রিভিউ: মাসুদ রানা -মৃত্যুঘণ্টা লেখকঃ কাজী আনোয়ার হোসেন, সহযোগী কাজী মায়মুর হোসেন। হঠাৎ করে খুন হয়ে যান মাসুদ রানার পরিচিত জেনেটিক্স বিজ্ঞানী আহসান মোবারক। সেইসাথে কিডন্যাপ হয়ে যায় তার মেয়ে মোনা। মোনা কে খুঁজতে গিয়ে সে জানতে পারে যে মৃত্যুর পূর্বে আহসান মোবারক মানুষের আয়ু বেড়ে যায় এমন একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছিলেন ।তারপরে এক অদ্ভুত চিঠি আসে ইউএন অফিসে যাতে ছিল ভাইরাস। এ ভাইরাসের আক্রমণে মারা যায় একজন কর্মকর্তা। সেখান থেকে মাঠে নামে মাসুদ রানা ।তার সঙ্গী হয় এলেনা রবার্টসন ।তারপরে তারা জানতে পারে এসব করছে এক কাল্ট যে কিনা ধর্মের বিরুদ্ধে ।যার কাছে ধর্মের কোন মূল্য নেই, নেই সৃষ্টিকর্তার কোন মূল্য ।বুর্জ আল আরব হোটেলে মাসুদ রানার সঙ্গে শত্রুপক্ষের লেগে যায় এক রুদ্ধশ্বাস লড়াই ।কিডন্যাপ হয়ে যাওয়া মোনা কে বাঁচিয়ে আনতে গেলে সে মুখোমুখি হয় এক শত্রুর ।রানা কে মারার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে শত্রু। কিন্তু এলেনা ও তার প্রচেষ্টায় সে যাত্রায় সে রক্ষা পেয়ে যায়।
Read More
Was this review helpful to you?
By MTR Rahman,
24 Oct 2019
Verified Purchase
ভয়ঙ্কর এক ভাইরাস ছরিয়ে পরছে। সেই সাথে খুন হয়েছেন এক বিজ্ঞানী। উদ্ভব হয়েছে এক কাল্টের। সব রহস্য সমাধান করতে হবে রানাকে। নিরাপত্তা দিতে হবে বিজ্ঞানীর মেয়েকে... পারবে রানা ??? মৃত্যু ঘন্টা হকার অ্যান্ড লেইডলো সিরিজের "দ্য ইডেন প্রফেসি" এর ছায়া অবলম্বনে রচিত। যার লেখক গ্রাহাম ব্রাউন।