“পাশবিক-দ্বিতীয় খণ্ড" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ রানা জানতে চাইছে, সিআইএ-র কর্মকর্তা ডক্টর ডেভিড গ্রেবারের রহস্যময় ওই ল্যাবে কী আছে। ওদিকে ওরা জানে, ভয়ঙ্কর হিংস্র, রক্ত-পিশাচ ওই দানব আসছে। ধেয়ে। গলা শুকিয়ে গেছে সবার। কেউ জানে না, একশ’ জনেরও বেশি সশস্ত্র সৈনিক ওটাকে। ঠেকাতে পারবে কি না।...প্রাণ বাঁচাতে চলল ওদের। প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি! আবারও কিরাতের আঁধারে শুরু হবে। নিষ্ঠুর গণহত্যা, ভিজে যাবে মট অসংখ্য মানুষের তাজ রক্তে? ওই রাক্ষস-বধ করছি এবং সিআইএ-র কুটিল পরিকল্পনা ঠেকাতে গিয়ে শেষে মস্ত ঝুঁকি নিল রানা দানবের মুখােমুখি হবে বলে চলে গেল আদিম। যুগের বিশাল এক উত্তপ্ত মৃত্যু-গুহায়!
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন যে মানুষটি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণী। বিদ্যুৎ মিত্র এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। পাঠকদের কাছে পরিচিত প্রিয় কাজীদা নামে। প্রখ্যাত গণিতবিদ ও সাহিত্যিক বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ও মা সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী শামসুদ্দিন নওয়াব। পরিবারের সঙ্গীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই ‘কুয়াশা’ সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’ পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার। সালটা ১৯৬৫, মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে এলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি। সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বই সমূহ এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিসবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই সমগ্র রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের যে পিপাসা পাঠকের মনে তৈরি করেছে তা মেটাতে সাড়ে চারশোরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়ছে সেবা প্রকাশনীকে, যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।
ইসরায়েলীদের বিষাক্ত ইনজেকশনের কারনে বছরের একটা বিশেষ সময় শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতে হয় রানাকে। তাই বাধ্য হয়ে সেসময়টায় ছুটিতে গিয়ে অ্যাডভেঞ্চার টাইপ কাজ করে সময় কাটায় রানা। আর এভাবেই দক্ষ ট্র্যাকার হিসেবে চারদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই সুনামের কারনেই তার কাছে সাহায্য চাইতে আসে কর্ণেল ম্যাক্সমিলান, ড. ডেভিড গ্রেবার ও রহস্যময় সিআইএ অফিসার জেন্স সিমন্স। এক বিকট দর্শন অদ্ভুত দানব আমেরিকার দুটি সামরিক ও বৈজ্ঞানিক ফ্যাসিলিটিতে হামলা চালিয়েছে। খুন করেছে একশোর মতো কমান্ডো সৈনিককে এবং তাদের মাংসও খেয়েছে। তারা রানাকে লিডার বানিয়ে একটা সুপার কিলিং টিম পাঠাতে চায় যাতে তারা দানবটাকে হত্যা করে আসতে পারে। অগত্যা কাজটা নেয় রানা।
রানার টিমে বিশ্বের বিভিন্ন সফল শিকারী ও প্রাক্তন সৈনিকদের দেওয়া হয়। সেখানে আছে জিনা যে কিনা রাইফেলে অত্যন্ত ভালো। জাপানি তানামুরা ও টড ওয়েইলার। ব্রিটিশ সৈনিক প্রেষ্টন, বাড রলিন্স ও পৃথিবীর অন্যতম নামকরা জীববিজ্ঞানী ও জিনেটিক ইন্জিনিয়ার ড. সিরাজউদ্দিন। এছাড়া সাথে আছে হান্টার। রানার বডিগার্ড। একটি বিকট দর্শন দৈত্যাকার কালো নেকড়ে। যে অক্ষরে অক্ষরে রানার কথা শোনে। টিম নিয়ে নির্দিষ্ট প্রাণীর পিছু লাগে তারা। এবং তাদের প্রতি হামলাও হয় অতর্কিত। দানবটার অমানুষিক শক্তি দেখে বিস্মিত হয় রানা। কারন এর শারীরিক শক্তি একে ফুড চেইনের সবার ওপরে স্থান দেয়। অপরদিকে ড. সিরাজউদ্দিন বিস্মিত হন এই ভেবে যে এ ধরনের জন্তু তো দশহাজার বছর আগে গায়েব হয়ে গেছে। তাহলে এটা এখানে কেনো? ব্যাপার আরো ঘোলাটে করতে ওই দানব একসময় হাজির হয় রানার সামনে। রানাকে চরম অবাক করে দিয়ে কথা বলে রানার সাথে। এবং জানায় তার অভিলাস। সে শুধু খুন করতে চায়। আরো খুন করতে চায়। সমগ্র মানবজাতিকে মেরে খেতে চায় সে।
এফবিআই থেকে টম জেরাল্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয় দুটো ফ্যাসিলিটিতে ঘটে যাওয়া গণখুনের তদন্ত করতে। সে তার প্রাক্তন মেন্টর হ্যাঙ্ক ডিগবার্ট যে পাথরভাঙা নামে পরিচিত তার সাহায্য নিয়ে তদন্তে এগিয়ে যায়। ড. সিরাজউদ্দিনের ল্যাব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় সে যা তদন্তে সহায়তা করে। তবে এর প্রেক্ষিতে মারা যায় ড. সিরাজউদ্দিনের সহকারীনি ড. নিনা। মৃত্যুমুখে পড়ে আরেক সহকারীনি টিপা মুই। তাকে উদ্ধার করে জেরাল্ড ও পাথরভাঙা রওনা দেয় তৃতিয় আরেক ফ্যাসিলিটিতে যেখানে রয়েছে সমস্ত রহস্যের লুকানো উত্তর। আর এসবই নির্দেশ করছে রহস্যময় ড. ডেভিড ও জেন্স সিমন্সের দিকে। অপর দিকে সেই দানবও রওনা হয়েছে সেদিকে। তারও একটা বিশেষ জিনিস চাই। তবে তার আগে তাকে একটা অসমাপ্ত কাজ করতে হবে। মারতে হবে রানা ও তার কালো নেকড়ে হান্টারকে। কারন একমাত্রই এই দুজনই তাকে পর্যাপ্ত ব্যাথা দেবার ক্ষমতা রাখে। আসছে সে ফ্যাসিলিটিতে। তার সেই অমরত্বের সুধা দখল নেবার জন্য।
পাশবিক রানার বেশ লেটেষ্ট একটা বই। দুই খন্ড মিলে বইটা বেশ বড় এবং শেষ করতে বেশ সময় লেগে যায়। এখানে গতানুগতিক রানাকে দেখা যায়নি। বরং সর্ম্পুন অন্য রানাকেই দেখা গেছে। এখানে তার পরিচয় একজন এজেন্টের বদলে একজন শিকারীই বেশী প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি তার বিসিআই পরিচয়ও ধরতে গেলে ব্যবহারই হয়নি। এখানে ফোকাস করা হয়েছে মূলত তার ট্র্যাকিং করার গুণাবলীকেই। চিরচেনা যে রানাকে আমরা চিনি তাকে এখানে তেমন একটা দেখতে পাইনি বলা যায়। অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে ড. সিরাজউদ্দিনকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে পরিচয় করানো হয়েছে তেমন ভূমিকা বইতে পাওয়া যায়নি। হান্টিং টিমের সাথে তারমতো বৃদ্ধকে পাঠানো অনেকটা বাস্তবতা বর্হিভূত বলে মনে হয়েছে। হান্টিং টিমের কোন উপকারে তিনি লেগেছেন বলে মনে হয়নি বরং তাদের অসুবিধারই সৃষ্টি করেছেন। যেমনটা আশা করেছিলাম তার থেকে দানবের ব্যাখাটা বের হবে তেমনটা ঘটেনি। বইয়ে রানাই অবশ্য একচ্ছত্র নায়ক নয়। বইতে টম জেরাল্ড ও পাথরভাঙারও রয়েছে নায়ক টাইটেল পাবার মতো ভূমিকা। এই দুটি চরিত্র পাঠকের বেশ পছন্দ হবে। দুটি চরিত্রই বেশ ডেডিকেটেড। বইতে তাদের দারুন ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে বয়স হওয়া সত্তেও সাবেক মার্শাল পাথরভাঙা যেভাবে লড়াই করেছেন তা অসাধারন। আর দানবটিকে মারতে তারই ভূমিকা সবচেয়ে বেশী। পাশবিককে হরর বইও বলা যায়। কিছু অংশ আছে ভয় ধরানোর মতো। ভয়ঙ্কর সব হত্যার বর্ণনা।
তবে বইতে বহু অপ্রয়োজনীয় অংশ আছে। দানবের একই চিন্তা ভাবনা ঘুরেফিরে বারবার উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটি টেনে নেওয়া হয়েছে ধীর গতিতে। জেন্স সিমন্সের শেষদিক ছাড়া কোন ভূমিকাই রাখা হয়নি। এটা কোন প্রাচীন দানব তার নাম উল্লেখ্য করা হয়নি। শুধু দশহাজার বছর আগে এরা পৃথিবীতে ছিলো এতোটুকু তথ্যই এদের সর্ম্পকে দেওয়া হয়েছে। বিশাল এই বৈজ্ঞানিক ফ্যাসিলিটির পিছনে মূলহোতা কারা তাও ভালোমতো দেখানো হয়নি। বইতে নেকড়েটার বেশ গুরুত্ব থাকলেও শেষ অ্যাকশনে বেচারা বাদ পড়েছে। দানবটিকে দেখানো হয়েছে অতিরিক্ত ক্ষমতাশালী হিসেবে। বিসিআইকে একদম গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ যে বিপদে রানা পড়েছে তাতে বুড়োর সাথে কিন্তু তার কথা বলা উচিত ছিলো। আরো একটা জিনিস অসামন্জস্য লেগেছে। দানবটির গুলিতে কিছু হয়না কিন্তু ছোড়ার আঘাতে সে ব্যাথা পায়। এটা অদ্ভুত। ভালো লেগেছে রানার চিন্তাভাবনা। তবে রানাকে ছাপিয়েও ভালো লেগেছে টম জেরাল্ড ও তার মেন্টর পাথরভাঙা ডিগবার্টকে। হ্যাপি রিডিং। রেটিং- ৪.৮০/৫.০০
Read More
Was this review helpful to you?
By iqbal mahfuj,
17 Sep 2015
Verified Purchase
রানা জানতে চাইছে, সিআইএ-র কর্মকর্তা ডক্টর ডেভিড গ্রেবারের রহস্যময় ওই ল্যাবে কী আছে। ওদিকে ওরা জানে, ভয়ঙ্কর হিংস্র, রক্ত-পিশাচ ওই দানব আসছে ধেয়ে। গলা শুকিয়ে গেছে সবার। কেউ জানে না, একশ’ জনেরও বেশি সশস্ত্র সৈনিক ওটাকে ঠেকাতে পারবে কি না। ...প্রাণ বাঁচাতে চলল ওদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি! আবারও কি রাতের অাঁধারে শুরু হবে নিষ্ঠুর গণহত্যা, ভিজে যাবে মাটি অসংখ্য মানুষের তাজা রক্তে? ওই রাক্ষস-বধ করতে এবং সিআইএ-র কুটিল পরিকল্পনা ঠেকাতে গিয়ে শেষে মস্ত ঝুঁকি নিল রানা— দানবের মুখোমুখি হবে বলে চলে গেল আদিম যুগের বিশাল এক উত্তপ্ত মৃত্যু-গুহায়!
Read More
Was this review helpful to you?
By MTR Rahman,
23 Oct 2019
Verified Purchase
এবার সিআইএও রানার বিরুদ্ধ। রাক্ষস-বধ করতে এবং সিআইএ-র কুটিল পরিকল্পনা ঠেকাতে গিয়ে শেষে মস্ত ঝুঁকি নিল রানা। দানবের মুখোমুখি হবে বলে চলে গেল আদিম যুগের বিশাল এক উত্তপ্ত মৃত্যু-গুহায়! পাশবিক বইটি ক্রিয়েচার হান্টিং থ্রিলার "হান্টার" এর ছায়া অবলম্বনে রচিত, যার লেখক জেমস বায়রন হাগিনস